সংবাদদাতা, কালনা: অল্প বৃষ্টিতেই কালনা রাজবাড়ির প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন লালজি মন্দির চত্বর জলে থইথই করছে। মন্দির দেখতে এসে সমস্যায় পড়ছেন পর্যটকরা। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে প্রাচীন এই স্থাপত্য। এবিষয়ে মন্দিরের দায়িত্বে থাকা পুরাতত্ত্ব বিভাগের হেলদোল নেই। তাতে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
বর্ধমান রাজাদের আমলে তৈরি দু’-তিনশো বছরের প্রাচীন নানা স্থাপত্য ও মন্দির কালনা শহরজুড়ে রয়েছে। রাজবাড়ি চত্বরে ২৫ চূড়াবিশিষ্ট লালজি মন্দির ও কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরের সঙ্গে প্রতাপেশ্বর দেউল, রাসমঞ্চ ও বৃত্তাকারে তৈরি ১০৮শিব মন্দির প্রচীন ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। প্রত্যেকটি মন্দিরের গায়ে রয়েছে টেরাকোটার শিল্পনৈপুণ্যের নিদর্শন। সারা বছর দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক আসেন প্রাচীন এই স্থাপত্য দেখতে। বিশেষ করে প্রতাপেশ্বর দেউলে থাকা শিল্পনৈপুণ্য দেখতে ভিড় জমান পর্যটকরা। মন্দিরের গায়ে পৌরাণিক দেবদেবী সহ নানা প্রাচীন সামাজিক পেক্ষাপট টেরাকোটার শিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ২৫ চূড়াবিশিষ্ট লালজি মন্দিরটি ১৭৩৯সালে নির্মিত। মন্দিরের সামনে রয়েছে প্রশস্ত নাটমন্দির। পাশেই রয়েছে গিরিগোবর্ধন মন্দির। ওই মন্দিরের উপরে ও গায়ে রয়েছে বিভিন্ন দেবদেবী ও পশুপাখির মূর্তি। প্রায় তিনশো বছরের পুরনো হলেও আজও অতীত ভাস্কর্য দেখার মতো। মন্দিরে অধিষ্ঠিত রয়েছে বর্ধমানের রাজাদের আরাধ্য রাধা-গোবিন্দ, যা লালজিদেব নামে পরিচিত। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (এএসআই) অধীনে এই মন্দিরটি থাকলেও বর্তমানে খুবই অবহেলিত। মন্দিরের গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। অল্প বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হচ্ছে মন্দির চত্বর। জমছে শ্যাওলা। জল জমে মশার আতুরঘর তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এবিষয়ে মন্দিরের দায়িত্বে থাকা পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকদের বলেও কোনও কাজ হয় না। উপরন্তু কোনও সমস্যা নিয়ে জানাতে গেলে পর্যটকদের উপর চোটপাট করা হয়। কালনার বাসিন্দা প্রশান্তকুমার সামন্ত বলেন, পুরাতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বে থাকা অফিসাররা মন্দিরগুলি নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি ভেবে নিয়েছেন। পর্যটকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নিত্যদিনের ঘটনা। লালজি মন্দিরে জমা জল নিয়ে আমরা জানালেও কাজ হয়নি। অথচ জল জমে প্রাচীন স্থাপত্য ধ্বংসের পথে এগচ্ছে। পেশায় শিক্ষক ইতিহাস গবেষক অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মন্দিরগুলি রক্ষার জন্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে। অথচ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মন্দিরের গায়ে থাকা অপূর্ব শিল্পকলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কালনা মহকুমা ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও এবিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের উচিত গুরুত্ব দিয়ে প্রাচীন স্থাপত্য রক্ষা করা। তবে, এব্যাপারে দায়িত্বে থাকা আধিকারিক কোনও মন্তব্য করতে চাননি।-নিজস্ব চিত্র