• স্কুলে পড়ায় ডামি, মাসে গিয়ে হাজিরা 
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, চণ্ডীপুর: টানা পাঁচ বছর স্কুলে ক্লাস না করেও শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত মাইনে তুলছেন এক তৃণমূল নেতা। মাসের শেষে স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতা ভরাট করছেন ওই ‘কীর্তিমান’ নেতা। নিজে স্কুলে না গিয়ে একজন ‘ডামি শিক্ষিকা’ রেখেছেন। চণ্ডীপুর ব্লকের ভগবানখালি নিউ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক স্বপন প্রধান পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ সদস্য। তাঁর স্ত্রী বৃন্দাবনপুর-২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। ২০১৯সাল থেকে ওই তৃণমূল নেতা তাঁরই জেঠতুতো ভাইয়ের স্ত্রী অমিতা প্রধানকে ডামি টিচার হিসেবে রেখে ক্লাস করাচ্ছেন।


    মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ভগবানখালি নিউ প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন অমিতা। স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসে পড়াচ্ছেন প্রধান শিক্ষক নিতাইচরণ মণ্ডল। অন্যান্য দিনের মতোই স্বপনবাবু স্কুলে গরহাজির। প্রধান শিক্ষক ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, আমাদের স্কুলে মোট ১০৮জন ছাত্রছাত্রী। মোট চারজন শিক্ষক আছেন। তাঁদের মধ্যে স্বপন প্রধানও আছেন। তবে, সময়ের অভাবে স্বপনবাবু ক্লাস নিতে পারেন না। তাই তিনি অমিতা প্রধান নামে একজনকে রেখেছেন। তিনি নিয়মিত আসেন এবং ক্লাস নেন। 


    ২০০৮থেকে ২০১৮সাল পর্যন্ত চণ্ডীপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন স্বপন। ২০১৮থেকে ২০২৩সাল পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী মানসী প্রধান বৃন্দাবনপুর-২ পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। গত পঞ্চায়েতে নির্বাচনে  স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ভোটে দাঁড়ান। জয়ী হয়ে স্ত্রী বৃন্দাবনপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন। স্বপনবাবু ৩৪নম্বর জেলা পরিষদ আসন থেকে জয়ী হন। একদা নৌসেনায় কর্মরত ছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। অবসর নেওয়ার পর ২০১২সালে প্রাইমারি শিক্ষকের চাকরি পান। প্রথমে রামনগর-১ ব্লকের অধীন একটি স্কুলে জয়েন করেন। ২০১৩সালে বাড়ি থেকে ৫০মিটার দূরে ভগবানখালি নিউ প্রাইমারি স্কুলে বদলি হন। স্কুল লাগোয়া প্রাসাদোপম বাড়ি। আট ফুটের উঁচু দেওয়াল ঘেরা বাড়ি দেখলে চোখ আটকে যায় অনেকের। চণ্ডীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত স্বপনবাবু ২০১৯সাল থেকে স্কুলে ক্লাস করা ছেড়ে দিয়েছেন। পরিবর্তে ক্লাস নিচ্ছেন ওই ডামি শিক্ষিকা। তবে স্বপনবাবু মাসের শেষে স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করছেন। এটাই টানা পাঁচ বছর ধরে চলে আসছে। নরঘাট সার্কেলের অধীন এই স্কুলে এত বছর ধরে অনিয়ম চললেও কেন স্কুল পরিদর্শকের নজরে এল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


    জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) পঙ্কজ সরকার বলেন, এসআইকে ওই স্কুল ভিজিট করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। প্রধান শিক্ষক নিতাইচরণ মাইতি বলেন, স্বপনবাবু শাসকদলের নেতা। তাঁর অনেক দায়িত্ব। তাই তাঁর এই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি। তাঁর হয়ে অমিতা ক্লাস নেন। স্বপনবাবু মাঝেমধ্যে এসে সই করে যান। ওই ডামি শিক্ষিকা বলেন, ২০১৯সাল থেকে আমি ক্লাস করছি। ক্লাস করার জন্য স্বপনবাবু আমাকে সাম্মানিক দেন। বিতর্কের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ওই তৃণমূল নেতা বলেন, আমি প্রায়ই স্কুলে যাই। স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা কম থাকায় অমিতা প্রধানকে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিতর্কের কিছু নেই। চণ্ডীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। আমি স্বপন প্রধানের সঙ্গে এনিয়ে কথা বলব। 
  • Link to this news (বর্তমান)