সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: মঙ্গলবার সকালে রঘুনাথগঞ্জের মিয়াপুর রেলওভার ব্রিজ সংলগ্ন ঝোপ থেকে এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম রতন মণ্ডল। তাঁর বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ থানার সেকেন্দ্রা গ্রামপঞ্চায়েতের লালখানদিয়ার গ্রামে। যদিও তিনি গত কয়েকমাস ধরে স্ত্রীকে নিয়ে জঙ্গিপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন মিয়াপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। পুলিস মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুরে মহকুমা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তিনি পেশায় হকার ছিলেন। মৃতের শরীরে একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে বলে পরিবারের লোকজনের দাবি। যুবককে তাঁর স্ত্রী খুন করে ফেলে দিয়েছে বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। বেশ কিছুদিন ধরে দম্পতির মধ্যে অশান্তি চলছিল। এই ঘটনায় মৃতের স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিস। ঘটনার প্রকৃত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
এব্যাপারে রঘুনাথগঞ্জ থানার এক পুলিস অফিসার বলেন, দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃতের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে মিয়াপুরে পূর্বপাড়ায় ঝোপের মধ্যে রতনকে পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁর নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। মৃতের হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রথমে মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত ও পা কেটে দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা মৃতের স্ত্রীকে খবর দেন। খবর দেওয়া হয় রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিসকেও। রাতে তাঁরা একই ঘরে শুয়ে থাকলেও কীভাবে এমনটা হল, এবিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মৃতের স্ত্রী দাবি করেন। ভোর রাতে শৌচকর্মের নাম করে স্বামী ঘরের বাইরে যান বলে তাঁরা দাবি। সকালে গ্রামবাসীর মুখে ঝোপের মধ্যে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে বলে জানতে পারেন।
যদিও যুবকের পরিবারের লোকজনের দাবি, রতনের স্ত্রী রাতবিরেতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন। প্রায়ই রাতে বাড়ি ফিরতেন না। এনিয়ে দম্পতির মধ্যে মনমালিন্য শুরু হয়। স্ত্রীর জেদের কারণেই গ্রামের বাড়ি ছেড়ে মিয়াপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। এদিন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল মর্গের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের ভাই হারাধন মণ্ডল। তিনি বলেন, বউদিই জোর করে দাদাকে গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে চলে আসে। বউদি বাড়িতে থাকত না। এখানে সেখানে চলে যেত। রবিবার দাদার সঙ্গে ফোনে মায়ের কথাও হয়েছে। সব তো ঠিকঠাক ছিল। বাড়ির পাশে দাদা খুন হয়ে গিয়েছে আর ঘরে বউদি ঘুমাচ্ছে, এটা অবিশ্বাস্য।
যদিও মৃতের স্ত্রী রেখা মণ্ডল বলেন, আমরা ঘরে শুয়েছিলাম। স্বামী ভোর রাতে বাইরে যায়। তারপর আমি ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। প্রতিবেশীরা আমাকে খবর দেয়। সেকেন্দ্রা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান পারভিন খাতুন বলেন, কী হয়েছে পুলিস তদন্ত করে দেখছে। যে বা যারা দোষ করেছে, তারা অবশ্যই সাজা পাবে।