• ভিনরাজ্যে বিক্রি সরকারি ট্রাক্টর
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: সমবায় সমিতির সরকারি ট্রাক্টর বিক্রি হয়ে গিয়েছে ভিন রাজ্যে! অথচ সেই বিক্রির বিষয়টি কোনও সদস্যই জানতে পারেননি। যখন তাঁরা জানতে পারেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে সমিতির ম্যানাজারের। সমিতির সদস্যদের তরফ থেকে এনিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।  কালীগঞ্জের পালিতবেগিয়া পঞ্চায়েতের বৈরামপুর খরদা পলাশি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। রীতিমতো স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে সেই ট্রাক্টর বিক্রি করা হয়েছে বলে সদস্যদের অভিযোগ। তবে, শুধু ট্রাক্টর বিক্রি নয়, একাধিক দুর্নীতিতে অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। যদিও ম্যানেজার সেই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।


    এদিকে প্রশাসনের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত রিপোর্টও জমা পড়েছে জেলার সমবায় দপ্তরে। সমবায় দপ্তরের জেলা অধিকারিক সজল রায় বলেন, রিপোর্ট জমা পড়েছে। আমরা দ্রুত অ্যাকশন নেব। যদিও ম্যানেজার জহিরউদ্দিন শেখ বলেন, এই সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। ব্যক্তিগত রাগ থেকে আমার বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে। এর পিছনে রাজনীতি রয়েছে। ট্রাক্টরটি লিজে দেওয়া আছে। বিক্রি করা হয়নি। 


    নদীয়া জেলায় ফের প্রকাশ্য এসেছে সমবায় সমিতির দুর্নীতির অভিযোগ। এবারও দুর্নীতির কাঠগড়ায় সেই সমিতির ম্যানেজার। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই সমিতিতেও নির্বাচিত কমিটি বা বোর্ড নেই। স্পেশাল অফিসার দিয়েই সমিতি চালানো হয়। এমনিতেই নদীয়া জেলার সমবায় সমিতিগুলিতে বেশ কয়েক বছর ভোট হয়নি। যার ফলে সমবায় সমিতি ও সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি মিলিয়ে ৮৭৫টি জায়গায় কোনও নির্বাচিত বোর্ড নেই। অর্থাৎ সেগুলি কার্যত অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নজরদারি চালানোর লোক না থাকায় বেশকিছু সমিতির ম্যানেজার নিজেকে সর্বেসর্বা ভেবে বসেছেন বলে একাংশের অভিযোগ। 


    অতীতেও নদীয়া জেলায় একাধিকবার বিভিন্ন সমবায় সমিতির দুর্নীতিতে ম্যানেজারের নাম জড়িয়েছে। গতবছর এই কালীগঞ্জ ব্লকেই আসাচিয়া সমবায় সমিতির ম্যানেজার জেলও খেটেছেন। তাই সমবায় দুর্নীতি ঠেকাতে অবিলম্বে ভোট করিয়ে বোর্ড গঠনের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। 


    উল্লেখ্য, বৈরামপুরের এই কৃষি সমবায় সমিতির বয়স প্রায় ৬০বছর। এলাকার বহু চাষি এই সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত। যার মধ্যে প্রায় ২০০জন সদস্য ম্যানেজার জহিরউদ্দিন শেখের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। ট্রাক্টর বিক্রির পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, বিগত পাঁচ বছর এই সমিতিতে কোনও সাধারণ সভা ডাকা হয়নি। কেসিসি কার্ড করানোর জন্য চাষিদের থেকে ১০০ টাকা করে নেন বলেও অভিযোগ। এমনকী, চাষিদের কীটনাশকের দামও ইচ্ছামতো তিনি বাড়িয়ে দেন। ভুয়ো বিল বানিয়েও সমিতি থেকে টাকা তুলে নেন বলে জানাচ্ছেন বহু সদস্য। এমনকী, প্রভাব খাটিয়ে ম্যানেজার নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকেও লোন দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগপত্র ১৯৫ জন সদস্য সই করেছেন। 


    ওই সমিতির সদস্য অপূর্ব দে বলেন, ম্যানেজারের আত্মীয়স্বজনদের নামে একাধিক লোন করিয়ে দিয়েছেন। সেলাই মেশিনের ট্রেনিংয়ের টাকাও নয়ছয় হয়েছে। স্কুল ড্রেস তৈরির টাকাতেও দুর্নীতি হয়েছে। ট্রাক্টরটি ভিন রাজ্যে বিক্রি করা হয়েছে। এসব কিছু খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
  • Link to this news (বর্তমান)