পাতা তোলার সময় ১৫ দিন এগিয়ে আনার নির্দেশিকা জারি চা মন্ত্রকের
বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: পাতা তোলা বন্ধের নোটিস জারি হতেই অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ল উত্তরের চা শিল্পক্ষেত্রে। প্রতিবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাতা তোলা বন্ধ করা হয়। এবার টি বোর্ড নির্দেশিকায় জানিয়ে দিয়েছে, ৩০ নভেম্বরের পর বন্ধ থাকবে চা বাগানে পাতা তোলা। তাতেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে চা শিল্পমহল। বড় বাগানগুলির পাশাপাশি ক্ষুব্ধ ক্ষুদ্র চা চাষিরা। তাঁদের দাবি, এবার অতিবৃষ্টি, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় উষ্ণতা বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি সহ বিভিন্ন কারণে পাতার ফলন মার খেয়েছে। খরচ বেড়েছে চাষের। এমন অবস্থায় বাড়তি সময় দেওয়ার পরিবর্তে পাতা তোলার সময় কমিয়ে দিল টি বোর্ড। ক্ষুদ্র চা চাষিদের অভিযোগ, এখানকার চা চাষিদের সঙ্গে কোনও আলাপ আলোচনা না করে এই নির্দেশ জারি করেছে টি বোর্ড। যার যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বাগান বন্ধের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, চা শ্রমিকদের কর্মহীন হওয়ার সম্ভাবনাও একইভাবে তৈরি হয়েছে। তাই টি বোর্ডের কাছে দাবি, নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনা করা হোক। ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, সোমবার টি বোর্ড থেকে ই-মেল আসে। যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, এ রাজ্যে বাগানগুলি থেকে চা পাতা তোলার শেষ তারিখ টি বোর্ড ধার্য করেছে ৩০ নভেম্বর। ওই নির্দেশিকায় আমরা রীতিমতো হতবাক। এখানকার চা শিল্পে ওতপ্রোতভাবে জড়িতদের সঙ্গে কথা না বলে টি বোর্ড এটা ঘোষণা করেছে। এবার ৭০ মিলিয়ন কিলো চা উৎপাদন কমেছে। সঙ্গে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা চাষের খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। এমনিতেই ক্ষুদ্র চা চাষিরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। ক্ষুদ্র চা চাষিরা এখন রাজ্যের ৬৫ শতাংশ চা উৎপাদন করেন। ১০ লক্ষাধিক মানুষ এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। প্রতিবারই ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত চা পাতা তোলা যায়। তারফলে জানুয়ারি মাসে পর্যন্ত শ্রমিকদের রোজগারের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু এবার পাতা তোলার সময় কমানোয় ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শ্রমিকদের খরচ কীভাবে চালাব সেটাই এখন চিন্তার। এর ফলে ছোট বাগান তো বন্ধই হবে, বড় বাগানও বন্ধ হতে পারে বলে মনে করি। টি বোর্ডের কাছে আমাদের আবেদন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক।
উত্তরবঙ্গের প্রবীণ চা উৎপাদক তথা ডিবিআইটিএর প্রাক্তন সদস্য জীবনচন্দ্র পাণ্ডে বলেন, চা শিল্প সহায়ক হয় এমন কিছু পদক্ষেপ সেভাবে নেওয়া না হলেও, টি বোর্ড এই মরশুমে অনেকটা আগেই পাতা তোলা বন্ধের নির্দেশিকা জারি করে দিল। যা অনভিপ্রেত। এতে চা শিল্পে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমননিতেই এবার আবহাওয়ার জন্য সেচ ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে চা চাষের খরচ বেড়েছে।
টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া উত্তরবঙ্গ শাখার সম্পাদক সুমিত ঘোষের কথায়, এই মরশুমে উত্তরবঙ্গের সার্বিক চা উৎপাদনে ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ পিছিয়ে আছে। বৃষ্টি সময়মতো না হওয়ায় ফাস্ট ফ্লাশ, সেকেন্ড ফ্লাশের উৎপাদনও মার খেয়েছে। চা শিল্প ক্ষেত্রে বিপুল কর্মকাণ্ডে খরচ সামলে ওঠাই এখন দুষ্কর।