• কোলন ক্যান্সার বধে মোক্ষম অস্ত্র আতার বীজ!
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৪
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: খনি অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বাড়ছে কোলন ক্যান্সার ও আলসারেটিভ কোলাইটিস। যার জন্য দায়ী অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছিল। এবার সেই সমস্যার সমাধানও বের করে ফেললেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। তাঁদের দাবি, অ্যানোনা রেটিকুলাটা (বিজ্ঞানসম্মত নাম) নামে এক বিশেষ প্রজাতির আতার বীজের নির্যাসেই রয়েছে ক্যান্সার বধের মোক্ষম অস্ত্র। ইতিমধ্যেই কোলন ক্যান্সার সারানোর ক্ষেত্রে ওই নির্যাসের কার্যকারিতা আশার আলো দেখাচ্ছে। ইদুঁরের দেহে সফল ট্রায়ালও হয়েছে। মানব দেহে ট্রায়াল হলে সাফল্য আসতে পারে বলে আশাবাদী গবেষকরা। 


    বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রেই ইঁদুরের উপর ট্রায়াল হয়। সাফল্য মিলতেই আবেগ-উচ্ছ্বাসে ভেসে যান গবেষকরা। তারপর আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিন (বালটিমোর)-এর সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণার কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগ। আমেরিকায় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও হয়েছে। মানব দেহের ক্যান্সার আক্রান্ত কোলনের কোষ আলাদা করে তাতে প্রয়োগ করা হয় আতা বীজের নির্যাস। ট্রায়ালে সাফল্যও মিলেছে। তার পরেই ভারতে পেটেন্ট পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। কোলন ক্যান্সারের পাশাপাশি আতা বীজের নির্যাস শিশুদের ব্রেন ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সার সারাতেও উপযোগী কি না, তা নিয়েও আমেরিকায় গবেষণা চলছে। 


    আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বের সেরা দুই শতাংশ বিজ্ঞানীর মধ্যে অন্যতম সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়। তিনি কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী। তাঁর অধীনে থাকা চার গবেষক পড়ুয়া খনি অঞ্চলে কোলন ক্যান্সারের উপর সমীক্ষা করেন। তাতে উঠে আসে আসানসোল-রানিগঞ্জের বহু মানুষ কোলন ক্যান্সার বা বৃহদন্ত্রে ক্যান্সারের সমস্যায় ভুগছেন। ওই সমস্ত ক্যান্সার আক্রান্তদের কীভাবে কম খরচে চিকিৎসা করানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। প্রায় দু’বছরের চেষ্টায় সাফল্য আসে। ইঁদুরের উপর আতা বীজের নির্যাস প্রয়োগ করে অভূতপূর্ব সাড়া মেলে। তা দেখে উৎসাহিত হন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিজ্ঞানী অদিতি ব঩ন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর টিমও সেই গবেষণায় যোগ দেয়। সকলের দাবি, এখন পর্যন্ত গবেষণা ইতিবাচক পথ দেখিয়েছে। মানব দেহে আতা বীজের নির্যাস থেকে তৈরি নমুনা প্রয়োগ করা হলে উল্লেখযোগ্য ফল মিলতে পারে। শুধু তাই নয়, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষকে দমন করলেও নমুনাটি সুস্থ কোষগুলির উপর কোনও প্রভাব ফেলে না। 


    বিজ্ঞানীদের দাবি, আতাটি বিশেষ প্রজাতির হলেও একেবারেই অধরা নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই এই আতার গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ফলও হয় পর্যাপ্ত। বিজ্ঞানী সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ইঁদুরের শরীরে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এই আতা বীজের নির্যাস দিয়ে তৈরি নমুনা। আমাদের সঙ্গে আমেরিকার বিজ্ঞানীরাও কাজ করছেন। আমরা পুরো গবেষণাপত্রটি জমা করে পেটেন্টের আবেদন জানিয়েছি কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।’
  • Link to this news (বর্তমান)