• ‘অপারেশনে’ বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ব্যবহার করত গ্যাংস্টার সুবোধ
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৪
  • শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: তার ডেরায় সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকত বুলেট প্রুফ জ্যাকেট (বিপি)।  হাল্কা থেকে ভারী—সব ধরনের ‘বডি প্রোটেকটেড ভেস্ট’ ছিল সেখানে। কোনও ‘অপারেশনে’ যাওয়ার আগে পুলিস বা আধা সামরিক বাহিনীর কায়দায় বিপি জ্যাকেট তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠত গ্যাংস্টার সুবোধ সিং ওরফে দিলীপ সিং। তাকে জেরা করে এই তথ্য জানার পর রীতিমতো অবাক সিআইডির তদন্তকারীরা। যে জ্যাকেট কেবলমাত্র বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে, তা কীভাবে কুখ্যাত ডনের জিম্মায় গেল এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রাজ্য পুলিসের নজরও এড়িয়ে গেল কীভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


    সুবোধকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, কোথায় কোন ‘অপারেশন’ হবে, তার পরিকল্পনা অন্তত তিন মাস আগে থেকে ঠিক করে ফেলত সে। যে ব্যাঙ্ক, সোনার দোকান বা স্বর্ণঋণ দানকারী সংস্থায় হানা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকত, সেখানে প্রতিদিন কত টাকার লেনদেন হয় ও  কতজন কর্মী আছেন, সেসব লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিত সুবোধ। একজন নয়, একাধিক লোক পাঠিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করত। প্রতিটি রিপোর্ট মিলিয়ে দেখে এবং খুঁটিনাটি দিকগুলি বিশ্লেষণ করে তবেই ‘কাজে’ নামত গ্যাংস্টার। ‘টার্গেট’ থেকে স্থানীয় থানা বা ফাঁড়ি কত দূরে, তারও খবর থাকত তার কাছে। লুটপাট বা ডাকাতির খবর পেয়ে পুলিসের আসতে কত সময় লাগতে পারে, তার অঙ্ক কষা থাকত সুবোধের মোবাইলেই। তার সঙ্গে ‘অপারেশনে’ যাওয়া সদস্যদের নির্দেশ থাকত, দু’মিনিটে কাজ শেষ করে বেরিয়ে যেতে হবে। 


    গ্যাংস্টার তদন্তকারীদের আরও জানিয়েছে, ২০০৮-০৯ সালে পরপর বেশ কয়েকটি ঘটনার পর সে পুলিসের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। কেজি কেজি সোনা লুটের অভিযোগে তাকে ধরতে মরিয়া হয়ে ওঠে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিস। সুবোধ বুঝে যায়, ঝুঁকি বাড়ছে। লুটপাটের পর পালানোর সময় পুলিসের মুখোমুখি পড়ে গেলে তাকে লক্ষ্য করেই পুলিস গুলি চালাবে। সেই সঙ্গে তার টিমের সঙ্গে বাহিনীর এনকাউন্টার হবে। আগাম ওই পরিস্থিতি চিন্তা করেই চীন থেকে ঘুরপথে বিপি জ্যাকেট আমদানি করে সে। প্রথমে বিভিন্ন ‘অপারেশনে’ সুবোধ ভারী বিপি জ্যাকেট পরেই যেত। পরে হাল্কা বিপি প্রোটেক্টর এসে যাওয়ায় সেগুলিই ব্যবহার করছিল। অকুস্থলে গাড়ি থেকে নামার আগে সে ওই বুলেট প্রতিরোধক জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে নিত। তাকে ঘিরে থাকা দেহরক্ষীরাও এই জ্যাকেট ব্যবহার করত। তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, চীন থেকে আনা এই বিপি জ্যাকেট কিনতে খরচ হয় তিন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। কারা গ্যাংস্টারকে এই বিপি জ্যাকেট সরবরাহ করত, তাদের নাম পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সঙ্গে তার জিম্মায় থাকা বিপি জ্যাকেটগুলিও  উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।    
  • Link to this news (বর্তমান)