নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার জন্য ১৬বছরের নাবালিকা পাড়ি দিয়েছিল সুদূর তেলেঙ্গানায়। সাত মাস ধরে সেরাজ্যের পটেনচেরু থানার ইন্দেশাম গ্রামে তারা সংসার পেতেছিল। কিন্তু সংসার পাতার বয়স না হওয়ায় আপাতত তাদের স্বপ্ন থমকে গেল। নাবালিকার পরিবারের লোকজন তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে। পুলিস তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে। কয়েক মাসের চেষ্টায় ওই নাবালিকাকে তেলেঙ্গানা থেকে উদ্ধার করা হল। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকার বাড়ি কালনা থানার গজলক্ষ্মীটোলা এলাকায়। ১৫ফেব্রুয়ারি ওই নাবালিকা স্কুলে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর আর সে বাড়ি ফেরেনি। কালনা মহকুমা পুলিস আধিকারিক রাকেশ চৌধুরী বলেন, পরিবারের অপহরণের মামলার অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু হয়। বিভিন্ন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ওই নাবালিকার অবস্থান জানা যায়। এরপরই পুলিস সেখানে গিয়ে অভিযান চালায়। ওই নাবালিকাকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের বাড়ি কালনা থানা এলাকাতেই। বেশ কিছুদিন কথা বলার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। ওই যুবক বুঝিয়ে নাবালিকাকে তেলেঙ্গানায় নিয়ে যায়। সে সেখানে কাজ করে। তার ধারণা ছিল অন্য রাজ্যে চলে গেলে পুলিস তাকে পাকড়াও করতে পারবে না। কিন্তু তার সেই ধারণা পুলিস ভুল প্রমাণিত করেছে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, ১৮বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যায় না। কোনও যুবক ভুল বুঝিয়ে তাদের নিয়ে গেলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১৮বছরের আগে মেয়েরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ওই নাবালিকার পরিবারের লোকজন অপহরণের মামলা করেছিল। সেইমতোই কেস করা হয়।
পুলিস জানিয়েছে, ওই প্রেমিক-প্রেমিকা তেলেঙ্গানায় ঘরভাড়া নিয়েছিল। পুলিস ছদ্মবেশ ধারণ করে তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ওই গ্রামে পৌঁছয়। সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার পরেই অভিযান শুরু করে। জেলা পুলিসের আর এক আধিকারিক বলেন, সম্প্রতি জেলায় এরকম আরও কয়েকটি ঘটনা হয়েছে। প্রেমিকরা ভেবে নেয় অন্য রাজ্যে নাবালিকা প্রেমিকাকে নিয়ে গিয়ে ঘর বাঁধলে তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। কিন্তু সেটা হবে না। মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে তদন্তকারীরা ঠিক নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। অনেকেই ধরা পড়ার ভয়ে মোবাইল বা সিম বদলে নেয়। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পুলিসের কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে। ধৃত যুবক পুলিসকে জানিয়েছে, ওই নাবালিকাকে তেলেঙ্গানা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা সে আগেই করেছিল। সেইমতো ট্রেনের টিকিট কাটে। ওই নাবালিকা অন্যান্যদিনের মতো স্কুলে যাওয়ার জন্যই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। স্কুলে না গিয়ে সে তেলেঙ্গানা পৌঁছে যাবে তা আন্দাজ করতে পারেননি তার পরিবারের লোকজন। পুলিসের সহযোগিতায় মেয়ে ঘরে ফেরায় পরিবারের লোকজন স্বস্তি পেয়েছেন।