নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বৃষ্টি কম হওয়ার জেরে এখনও পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে ধানের চারা রোপণ প্রক্রিয়া অনেকটাই পিছিয়ে আছে। বৃষ্টির পরিমাণ কিছুদিনের মধ্যে না বাড়লে এর জেরে চালের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় কৃষিদপ্তর বেশ চিন্তিত। কারণ চালের দাম এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী। পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদন কম হলে গোটা দেশেই পড়বে তার নেতিবাচক প্রভাব। কৃষি দপ্তর সূত্রের খবর, এবার গোটা রাজ্যে খরিফ মরশুমে ৪১.৮৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫.৪৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ হয়েছে। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি অনেক বেশি পরিমাণে হয়েছে। ফলে ধান চাষের প্রক্রিয়া যেখানে শুরু হয়েছে তার মধ্যে উত্তরবঙ্গের অংশ বেশি। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘এটা ঠিকই যে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি একটু কম হয়েছে। কিন্তু এখনও কিছুটা সময় আছে। আমরা সতর্ক। পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছি।’ কৃষিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, ধানের বীজতলা তৈরি কাজ দক্ষিণবঙ্গেও মোটামুটি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। বীজতলা থেকে ধানের চারা মূল চাষের জমিতে স্থানান্তরিত করার জন্য সেখানে বেশি পরিমাণে জল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বৃষ্টি কম হওয়ায় সেটা হচ্ছে না। এটাই চিন্তার বিষয়। কারণ বীজতলায় নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ধানের চারা থেকে গেলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এতে উৎপাদনের হার কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও রাজ্য কৃষিদপ্তরের চুঁচুড়া চাল গবেষণা কেন্দ্রের প্রাক্তন কর্তা ডঃ পার্থ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, এরকম পরিস্থিতিতে বীজতলায় ধানের চারার পরিচর্যা করার বিশেষ পদ্ধতি আছে। কৃষিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে চাষিদের সেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রাজ্যে প্রতি বছর আড়াই কোটি টনের বেশি ধান উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দেড় কোটি টনের বেশি ধান উৎপাদন হয় খরিফ মরশুমে। মূলত বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করে খরিফ মরশুমে আমন ধানের চাষ করা হয়। বৃষ্টি কম হওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কখনওসখনও আমন ধানের চাষ করার জন্য সেচের জল সরবরাহ করার বিশেষ উদ্যোগ নিতে হয়েছে সরকারকে।
কৃষিদপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, এখনও সেরকম পরিস্থিতি হয়নি। দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ এলাকায় এখনও স্বাভাবিকের থেকে ৫০ শতাংশের মতো কম বৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিনে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও তা ধানের চারা রোপণ করার জন্য যথেষ্ট হয় বলেই কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আগামী শুক্রবার নাগাদ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোগপসাগরে আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে চলেছে। তার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে পারে। ওই বৃষ্টির দিকে এখন তাকিয়ে আছেন কৃষিদপ্তরের আধিকারিকরা।
সাধারণভাবে ১৫ আগস্টের মধ্যে ধানের চারা রোপণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তারপরে আগস্ট মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া করলে উৎপাদন অনেক কমে যায়। তখন ধানের বদলে বিকল্প ফসলের চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কৃষিদপ্তর সূত্রের খবর, সেরকম পরিস্থিতিতে বিকল্প চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা তৈরি আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জুলাই মাসের মধ্যে ধানের চারা রোপণ করা সবথেকে ভালো। রোপণ করতে দেরি হলে ধান গাছে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এই কারণে রোপণে দেরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে বীজতলাতে চারা গাছের বিশেষ পরিচর্যা করতে হয়।