• চোরাচালানে সুড়ঙ্গ ব্যবহার করত সাদ্দাম, ধান খেত থেকে ধৃত সঙ্গী 
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বারুইপুর: সাদ্দাম সর্দারের সুড়ঙ্গ নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। শুধুই কি নিজের পালানোর জন্যই এই ৪০ ফুট লম্বা গোপন রাস্তা তৈরি করেছিল এই নকল সোনার কারবারি দুষ্কৃতী? স্থানীয় ও পুলিসের প্রাথমিক ধারণা, নিজের বাড়িতেই নকল সোনার কাজ করত সাদ্দাম ও তার লোকজন। সেসব চোরাপথে চালান করার জন্যও ব্যবহার করা হতো এই সুড়ঙ্গ। চক্ষু আড়ালে দিনের পর দিন এভাবেই নানা সামগ্রী খালের ওপারে পাঠানোর কাজ করত সাদ্দাম। প্রশ্ন হল, এই সুড়ঙ্গ পথের ব্যাপারে পুলিস কি জানতো না? অনেকেই বলছেন, কুলতলি থানার কিছু পুলিসকর্মীর সঙ্গে যোগসাজস ছিল সাদ্দামের। সে কারণেই সুড়ঙ্গের কথা জেনেও তাঁরা নিশ্চুপ ছিলেন। সোমবার গোলমালের ঘটনা না ঘটলে, হয়তো সাদ্দামের এই চোরা পথের খবর গোপনই থেকে যেত। গ্রামবাসীদের দাবি, এই বাড়ি তৈরি করার সময়ই সুড়ঙ্গটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৫ বছর ধরে নকল সোনা কারবারের সঙ্গে যুক্ত এই দুষ্কৃতী। সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেই সময়ই এই বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। 


    এদিকে, সোমবার পুলিসের উপর হামলার ঘটনায় মোট ২৬ জনের নামে  অভিযোগ হয়েছে। তার মধ্যে এদিন একজনকে রীতিমতো তাড়া করে ধরেছে কুলতলি থানা। ধৃতের নাম আবছার আলি। পুলিসের কাছে খবর আসে, আবছার পায়েতপুর গ্রামে গা ঢাকা দিয়েছে। সেই মতো বড় বাহিনী নিয়ে এলাকা ঘিরে শুরু হয় তল্লাশি। ধানখেতের পাশে খালি গায়ে লুকিয়ে ছিল ওই ব্যক্তি। পুলিসকে দেখেই পালানোর চেষ্টা করে সে। প্রায় এক কিলোমিটার দৌড়ে আবছারকে পাকড়াও করা হয়। গ্রেপ্তারির পর তার গায়ে গেঞ্জি পরিয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিস। সাদ্দামের পরিবারের সদস্য সুফিয়া বিবির দাবি, সোনা পাচারের অভিযোগে গত বছর পুজোর আগে পুলিস গ্রেপ্তার করেছিল সাদ্দামকে। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত ভোটের সময় ওই দুষ্কৃতীর বাড়ি থেকে কুলতলি থানা ২ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা উদ্ধার করেছিল। মিলেছিল অস্ত্রও। একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছিল তার বাড়ি থেকেই। 


    নকল সোনার এই কারবার কুলতলিতে বাম আমলে নিরাপদ নস্কর নামে এক সিপিএম কর্মী শুরু করেছিল বলে জানা গিয়েছে। বর্তমানে সে বিজেপিতে। তৃণমূল আমলে তার পরিসর বেড়েছে। কুলতলির জালাবেড়িয়া তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ইয়ামিন মিস্ত্রির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সাদ্দাম। তাঁর মদতেই এই কারবার  চলত বলে জানা গিয়েছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। অঞ্চল সভাপতি ইয়াসিনের দাবি, কোনও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই। সুড়ঙ্গের কথাও আমার জানা ছিল না।  


    এদিকে, তদন্তে পুলিস জানতে পেরেছে, সাদ্দামের হয়ে মূলত দুটো টিম কাজ করত। তাতে আয়েদ আলি সর্দার ওরফে বোটো, ওসমান লস্কর, রেজাউল সর্দার, সাইনুল সর্দার, ছাকাত সর্দার ও শাজাহান সর্দার রয়েছে। পুলিস এই দলের খোঁজও শুরু করেছে।  এদিন নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলনে কুলতলি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমার বলেন, সুড়ঙ্গ পাওয়া গিয়েছে, সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এটা কী কাজে লাগত, তা এতো  তাড়াতাড়ি নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর প্রয়োজন নেই। আমরা এই বিষয়টিকে ছোট করেও দেখছি না। এবিষয়ে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, এটা একরকমের  চিটিং মার্কেট। কিন্তু এটা কত বড় বিষয়, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমরা তদন্ত করে দেখছি।
  • Link to this news (বর্তমান)