স্বপন দাস, কাকদ্বীপ : এ বছর বনশ্রী বিজলী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। কলেজে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু আধার কার্ডের সমস্যার জন্য ভর্তি হতে পারছেন না। এ ধরনের সমস্যা চলছিলই। এবার ক্রমশ তা গভীর হয়ে দেখা দিচ্ছে। আধার কার্ডের সমস্যার জন্য বনশ্রী কোনও সরকারি প্রকল্পের সাহায্য পান না। কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকাও পাননি। রেশন বন্ধ। করোনার ভ্যাকসিনটুকুও জোটেনি কপালে। আধার সংশোধনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছেন। কুলপি রামকৃষ্ণপুরের বিজলিপাড়া থেকে ছুটে গিয়েছিলেন কলকাতায় আধারের অফিসে। সেখানে কাজ না হওয়ায় রাঁচি পর্যন্ত দৌড়েছেন। কিন্তু সাত বছর হতে চলল। সমস্যার সমাধান কিছুতেই হচ্ছে না। কার্ড সংশোধনের জন্য এখনও পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছে পরিবারটি। বনশ্রীর বাবা দিনমজুর। খুবই কষ্টেসৃষ্টে দিন চলে তাঁদের। পরিবারটির কাছে ৬০ হাজার টাকা মুখের কথা নয়।
রত্নাকর বিজলীর তিন মেয়ে। তার মধ্যে জয়শ্রী বড়, বনশ্রী মেজো। জয়শ্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বনশ্রী এখনও ছাত্রী। ২০১৩ সালে বনশ্রীর আধার কার্ড তৈরি হয়। পরে ২০১৭ সালে তাঁর দিদি জয়শ্রীর আধার হয়। এরপরই বাধে গোল। দুই বোনের আধার কার্ড দু’টি আলাদা হলেও, আধার নম্বর একই আসে। আধার কার্ডে বনশ্রীর আঙুলের ছাপ। বায়োমেট্রিকেও তার আঙুলের ছাপ মিলে যাচ্ছে। কিন্তু আধার কার্ডে নাম ও ছবি উঠছে জয়শ্রীর। ফলে দু’বোনই আতান্তরে। দু’জনের কার্ড থেকেও নেই। দু’জনেই সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত। বনশ্রী কলেজে পর্যন্ত ভর্তি হতে পারছেন না। আর জয়শ্রী ভবিষ্যতে আর কী কী সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হবে সে আশঙ্কায় আতঙ্কিত।
তাঁদের মা স্বপ্না বিজলী বলেন, ‘এই সমস্যায় নাজেহাল হয়ে পড়েছি। কার্ড ঠিক করতে রাঁচি পর্যন্ত যেতে হয়েছে। কিন্তু কোথাও গিয়ে কোনও সমাধান পেলাম না। আমার স্বামী দিনমজুর। গরিব পরিবার কি ভাবে সব সামলাবে বলুন তো। আমাদের মতো পরিবারের কথা কেউ ভাবে না।’ তবে বিষয়টি শোনার পর দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের মহকুমা শাসক অঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আধার কার্ডের বিষয়টি সরাসরি এখান থেকে হয় না। তবে যেভাবে সম্ভব অবশ্যই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’
বনশ্রী কলেজে ভর্তি হবে। যত কষ্টই হোক ওঁকে পড়াবে বাবা। তারপর মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের ভার তুলে নেবে কাঁধে। এই স্বপ্ন দেখেন রত্নাকর ও স্বপ্না। কিন্তু সরকারি গাফিলতির কারণে মেয়ের অস্তিত্বই বিপন্ন হওয়ার জোগাড়। কীভাবে মুক্তি মিলবে লাল ফিতের ফাঁস থেকে? সেই পথের সন্ধানে দিনরাত প্রার্থনা করে চলেছে বিজলী পরিবার।