• শোভাবাজারে তোলাবাজির দ্বন্দ্ব! যুব নেতাকে প্রকাশ্যেই চড়-ঘুসি কাউন্সিলারের
    বর্তমান | ১৭ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এলাকায় রমরমিয়ে চলছে সাট্টা-জুয়ার কারবার, বেআইনি পার্কিং, ব্যবসায়ীদের থেকে তোলাবাজি সহ নানা অসামাজিক কাজকর্ম। কোনও বিরোধী দল নয়, একে অপরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনছে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠী! শুধু অভিযোগ এনেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। মঙ্গলবার দেখা গেল, দলের এক যুবনেতাকে প্রকাশ্যে চড়-ঘুসি মারছেন স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলার। শোভাবাবাজারের ঢুলিপাড়া, কলকাতা পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটেছে। এলাকাটি বড়তলা থানার অন্তর্গত। 


    সোমবার রাত থেকে উত্তেজনার সূত্রপাত হলেও মঙ্গলবার বেলার দিকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনাটি ঘটে। বচসা চরমে পৌঁছলে তৃণমূল যুব নেতা কেদার দাসকে কষিয়ে চড় মারতে দেখা যায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সুনন্দা সরকারকে। দু’পক্ষই এই ইস্যুতে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ নিয়ে বড়তলা থানার দ্বারস্থ হয়। লালবাজার জানিয়েছে, দু’পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’টি মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে। 


    স্থানীয় সূত্রের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই টাকাপয়সার ‘হিস্সা’ নিয়ে ঝামেলা চলছে। সোমবার রাতে তা বড় আকার নেয়। ওয়ার্ডের প্রাক্তন যুব সভাপতি কেদার দাসের অনুগামীদের অভিযোগ, ঢুলিপাড়া সংলগ্ন এলাকায় একটি বেআইনি পার্কিং থেকে তোলাবাজি 


    করছিল কাউন্সিলারের ‘ছেলেরা’। কেদারদা’ও আমাদের সঙ্গে সেই ঘটনার প্রতিবাদ করে। অন্যদিকে, কাউন্সিলার সুনন্দা সরকার ঠিক একই অভিযোগ তোলেন 


    কেদার দাসের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, বেআইনিভাবে টাকা তুলছিল স্থানীয় যুব সংগঠনের নেতারা। রাতেই সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। পুলিস সূত্রের দাবি, ঝামেলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় থানার টিম। অভিযুক্ত দু’পক্ষকেই বড়তলায় থানায় তুলে নিয়ে আসা হয়। মৌখিকভাবে মিটমাট করে নেওয়ার কথা দু’পক্ষকেই জানায় পুলিস। 


    ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সম্পাদক রাজু দাস বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বেআইনিভাবে টাকা তোলার সঙ্গে যুক্ত কাউন্সিলার। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন তিনি। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ ঢুলিপাড়াতে সাট্টার কারবারিদের থেকে তোলবাজি চালাচ্ছিলেন কাউন্সিলারের অনুগামীরা। আমরা প্রতিবাদ করতেই সেখানে হাজির হন কাউন্সিলার। এরপরেই কেদার দাসকে দেওয়ালে ঠেসে চড়, ঘুসি মারা শুরু করেন।’ এরপর জখম অবস্থায় সটান বড়তলা থানায় চলে আসেন কেদার। তাঁর অনুগামীরা থানার সামনে অবরোধ করেন। পুলিস কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ গ্রহণ করেছে। লালবাজার জানিয়েছে, সন্ধ্যায় সুনন্দা সরকারের পক্ষ থেকেও থানায় কেদার ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ দায়ের হয়েছে। 


    এদিন থানার বাইরে কেদারের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি ফের থানায় ঢুকে যান। কাউন্সিলার সুনন্দাদেবী বলেন, ‘কেদার এলাকায় সাট্টা-জুয়ার ঠেক চালায়। স্থানীয় মহিলাদের থেকে তোলাবাজি করে। ও আরও অনেক বেআইনি কাজে যুক্ত। আমরা সেটার প্রতিবাদ করেছি। তাই আমার নামে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। ওর বিরুদ্ধে পুলিসকে একাধিকবার জানিয়েছি আমি।’ গোটা ঘটনা নিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের সংযম থাকা উচিত। তাঁদের যদি অভিযোগ বা বক্তব্য থাকে তাহলে পুলিস বা দলকে জানাক। এই ধরনের ঘটনা কাঙ্খিত নয়। আশা করি, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন।’
  • Link to this news (বর্তমান)