বাড়ছে প্রতারণা! বিদেশে কাজে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা বঙ্গের শ্রমিকদের
এই সময় | ১৭ জুলাই ২০২৪
অনেক স্বপ্ন নিয়ে একমাত্র ছেলেকে জর্ডনে কাজে পাঠিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের সালারের শাহাদত শেখ। পরিণতি যে দুর্বিষহ হবে, কল্পনাও করেননি। জর্ডনে থাকার সময়ে ইদের ছুটিতে এক জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলেন শাহাদাতের ছেলে বছর পঁচিশের রাহুল শেখ। সেই সময়ে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন। ছুরির কোপে হাতের তিনটি শিরা কেটে যায়।রাস্তা থেকে উদ্ধার করে তাঁকে জর্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় পুলিশ। কিন্তু বিল মেটাতে না পারায় সুস্থ হওয়ার আগেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। প্রাণ হাতে নিয়ে সোমবার কোনও রকমে বাড়ি ফিরেছেন রাহুল। শাহাদাত জানিয়েছেন, মাস সাতেক আগে সেলাইয়ের কাজ পাইয়ে দেবে বলে রাহুলকে জর্ডনে নিয়ে যায় একটা কোম্পানি।
সেলাইয়ের বদলে লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ করানো হতো। যা মাইনে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তা-ও দেওয়া হয়নি। ভারতীয় দূতাবাস বিমানের টিকিট কেটে দেওয়ায় রাহুল দেশে ফিরতে পেরেছেন। মুর্শিদাবাদের কান্দির মহানন্দি গ্রামের মর্জিনা বিবিও ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে অথৈ জলে। গত দেড় বছর ধরে ছেলে আশাবুল শেখের কোনও খোঁজ নেই।
বছর ছাব্বিশের আশাবুলকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাফাইয়ের কাজে। সে জন্যে দালালকে দিতে হয়েছিল ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। এখন ছেলে কোথায়, জানেন না মা। দূতাবাস থেকে সম্প্রতি জানতে পেরেছেন, ছেলে এখন জেলে। মর্জিনাবিবির কথায়, ‘ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্যে বন্ধন ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছিলাম। সেই টাকা এখনও শোধ হয়নি। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’
মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার দিয়াড়া মল্লিকপুরের বছর সাতাশের ছোটন শেখ দু’বছর সৌদি আরবে কাটিয়ে মাস তিনেক আগে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাফাইয়ের কাজে। কিন্তু প্রথম তিন-চার মাস বসেই ছিলেন। যাওয়ার পরই তাঁকে একটি ফর্মে সই করানো হয়। পরে তিনি জানতে পারেন, সেটা আসলে একটা মুচলেকা।
যেখানে লেখা--তিনি একটি কোম্পানি থেকে ১২ হাজার রিয়াল চুরি করেছেন! সৌদি আরবে চাষবাসের কাজ করতেন। বিনিময়ে দু’বেলা শুধু খেতে পেতেন। টাকাপয়সা হাতে পাননি। বিদেশে কাজ করতে গিয়ে যাঁরা এ ভাবে প্রতারিত হচ্ছেন, তাঁদের ঘরে ফেরানোর জন্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন কর্ণসুবর্ণ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্ণধার মতিয়ুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘দালাল ধরে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই প্রতারিত হন। তাঁরা কোন কোম্পানিতে কাজ করতে যাচ্ছেন, সেই তথ্যটুকুও পরিবারের কাছে থাকে না। ফলে বিপদে পড়লে তাঁদের ফিরিয়ে আনাও মুশকিল।’
রাজ্য শ্রমদপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে রাজ্যের সব পরিযায়ী শ্রমিকের নাম রেজিস্ট্রেশন করানো হচ্ছে। কিন্তু অনেকে গোপনীয়তা বজায় রাখতে নাম নথিভুক্ত করাতে চান না। তা ছাড়া বেশির ভাগই দালাল ধরে যান। দু’-তিন হাত ঘুরে আরবের কোনও লোকাল এজেন্সির হাতে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই এজেন্সিও কোনও দায়িত্ব নিতে চায় না। প্রশাসনের কাছেও কোনও তথ্য থাকে না।’