এই সময়: ২০১৪-এর টেটের ভিত্তিতে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির একাধিক মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। তারমধ্যে ওই টেটের ভিত্তিতে ২০১৬-তে ৪২ হাজারের বেশি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অতিরিক্ত প্যানেল তৈরি করেছিল রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, সেই প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।ওই প্যানেলের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে, অর্থাৎ প্যানেলটি ‘ডেড’—এই যুক্তিতে প্যানেল প্রকাশে তীব্র আপত্তি জানায় পর্ষদ। তবে মঙ্গলবার পর্ষদের উদ্দেশে বিচারপতি অমৃতা সিনহা স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ‘ডেড প্যানেলটাই প্রকাশ করুন। মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলটাই দেখতে চাই। কোথা থেকে সেই প্যানেলে নাম এল, কারা ঠাঁই পেলেন প্যানেলে—সেটা দেখা জরুরি।’
মামলাকারীর অভিযোগ ছিল, ২০১৬ সালে তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু তাঁর নাম প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পরবর্তীতে পর্ষদের নিয়ম মেনে অতিরিক্ত ৫ শতাংশের প্যানেল প্রকাশ করা হয়। সেই প্যানেলেও নাম ওঠেনি মামলাকারীর। তিনি ওই ৫ শতাংশের অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশের জন্য আবেদন জানান পর্ষদের কাছে। পর্ষদ সেই আর্জি খারিজ করে দেওয়ায় তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
এদিন শুনানির শুরুতে মামলাকারীর আইনজীবী দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে বিচারপতি সিনহা প্রশ্ন করেন, ‘যদি মূল প্যানেল প্রকাশিত না হয়, অতিরিক্ত প্যানেল কী ভাবে প্রকাশিত হবে?’ আইনজীবী বলেন, ‘পর্ষদ মেরিট লিস্ট প্রকাশ করেনি। অতিরিক্ত ৫ শতাংশের লিস্টের কথা বলা হলেও সেই তালিকাও প্রকাশ করেনি। পর্ষদ বারবার বলেছে, প্যানেল মেয়াদ উত্তীর্ণ।’
যদিও পর্ষদের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, ‘সফল প্রার্থীদের টেট, অ্যাকাডেমিক স্কোর ও ইন্টারভিউয়ের নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়নি। এখন মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’ পর্ষদের আইনজীবীর আরও যুক্তি, ‘তদন্ত চলছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। প্যানেল তদন্তের আওতায় রয়েছে। তাই এই ব্যাপারে আদালত সিবিআইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক। কারণ, মূল প্যানেল প্রকাশের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’
যদিও বিচারপতির বক্তব্য, ‘পরীক্ষার্থী খারাপ হতে পারেন। কিন্তু আপনি (পর্ষদ) তো রাজ্যের একটা শক্তিশালী অঙ্গ। আগেও এই ধরনের প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপনারা অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশ করুন।’ ৩০ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি। এই নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করা হবে কি না, সেই ব্যাপারে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে রাজ্য।