এই সময়, আলিপুরদুয়ার: কৃত্রিম পদ্ধতিতে সাপের বাচ্চা ফোটানো হল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে। সঙ্গে গোখরো সাপেরও ২৬ ডিমকে প্রজনন করানো হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছে প্রখ্যাত হারপেটোলজিস্ট অনির্বাণ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। এতদিন লোকালয় থেকে উদ্ধার করা বিষধর সাপগুলিকে ফের প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার কাজ করত বনদপ্তর।কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাদি সাপের ডিমগুলি সংগ্রহ করা হতো না। ফলে সেই ডিমগুলির সিংহভাগই নষ্ট হতো বা শিকারি প্রাণীদের পেটে চলে যেত। কিন্তু গত ১৮ মে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার সাতপুকুরিয়ার গৃহস্থ বাড়ি থেকে একটি গোখরো সাপকে উদ্ধার করেন জলদাপাড়ার বনকর্মীরা। সঙ্গে উদ্ধার হয় ২৭টি সাপের ডিম। সেই সময়ে জলদাপাড়াতেই ছিলেন সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরী।
বিষয়টি নজরে আসতেই তিনি জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সংরক্ষক নভোজিত দেকে ওই ডিমগুলির কৃত্রিম প্রজনন করানোর পরামর্শ দেন। আনা হয় স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বাক্স। তারমধ্যে দেওয়া হয় বালি ও স্যাঁতসেঁতে মাটির মিশ্রণ। ডিমগুলি ওই পাত্রে রেখে সর্বক্ষণের জন্য ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ দেওয়া হয় বাল্বের সাহায্যে। ওই তাপমাত্রাই সাপের ডিম ফোটার জন্য আদর্শ।
আদ্রতার মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয় ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে। একটি ডিম খারাপ থাকায় বাচ্চা ফোটেনি। বাকি ২৬টি ডিমেরই সফল প্রজনন সম্ভব হয়েছে পঞ্চাশ দিনের মধ্যে। ৫ জুন ওই একই ভাবে একটি মাদি কালাচকে ছ’টি ডিমসহ উদ্ধার করা হয়। একটি ডিম নষ্ট হওয়ায় বাকি পাঁচটি ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোনোয় উচ্ছ্বসিত বনকর্তারা।
ডিম ফুটে ঠিক বেরোনোর আগে, ভিতরে থাকা ঘন তরল খেয়ে নেয় সাপের বাচ্চারা। ওই তরলই তাদের ৮ থেকে ১০ দিন প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার শক্তি জোগায়। তারপর প্রকৃতির নিয়মেই তারা শিকার ধরতে পারদর্শী হয়ে পড়ে। সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরী বলেন, ‘বাস্তুতন্ত্রে সাপের ভূমিকা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। ইতিপূর্বে গোখরো সাপের ডিমের সফল কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো হলেও কালাচ গোত্রীয় সাপের ডিমের কৃত্রিম প্রজনন জলদাপাড়াতেই প্রথম সম্ভব হয়েছে।’
সহকারী বন্যপ্রাণী সংরক্ষক নভোজিত দে বলেন, ‘সাপ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিষয়টি নিঃসন্দেহে এক নতুন নজির। এবার নিয়মিত ভাবে জলদাপাড়ায় সাপের ডিমের কৃত্রিম প্রজনন করা হবে।’