জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বিয়ের আবেদন, প্রতিবাদে সরব শিক্ষক সংগঠন
এই সময় | ১৭ জুলাই ২০২৪
এই সময়: রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দালানে বিয়ের অনুষ্ঠানের আবেদনের বিরোধিতায় সরব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (আরবুটা)। ওই দালানে ঠাকুরবাড়িরই এক সদস্যের বিয়ের অনুষ্ঠানের আর্জি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি গিয়েছে জানিয়ে মঙ্গলবারই ‘এই সময়’ সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়। ভবনটি ক্লাস ওয়ান হেরিটেজ।তার দালানে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান আয়োজনের আর্জি জানিয়ে চিঠি চালাচালিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ভাবে সম্মত হলেন, তা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে আরবুটা। তাদের বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঠাকুরবাড়ির দালান বিয়েতে ব্যবহৃত হচ্ছে, এ কথা ভাবাই যায় না।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি জ্যোৎস্না চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, ‘সকালে সংবাদপত্রে খবর দেখে আমরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা হতবাক হয়ে যাই। সমিতির তরফে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, ছাত্রছাত্রীদের এই আয়োজনের প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সবাইকে দুপুর আড়াইটের মধ্যে গণ প্রতিবাদপত্রে সই করার আর্জিও জানানো হয়েছিল।’
তিনি জানান, ওই প্রতিবাদপত্র নিয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভিসি ক্যাম্পাসে ছিলেন না। তাই রেজিস্ট্রার আশিসকুমার সামন্তের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। জ্যোৎস্নার বক্তব্য, ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দালানে আগামী ১৭ ডিসেম্বর বিয়েবাড়ি আয়োজনের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে রেজিস্ট্রার আশ্বস্ত করেছেন। একটি আবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত প্রশাসনিক পদ্ধতিই অনুসরণ করেছেন তাঁরা।’
তবে আরবুটা-র তরফে রেজিস্ট্রারকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এই আবেদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সোমবার রাতে জানিয়েছিলেন, জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাস সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে নেই। আর্জির ব্যাপারে ব্রাহ্ম সমাজের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষক সমিতির বক্তব্য, রাজ্য সরকার ১৯৬১ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি অধিগ্রহণ করে। এবং বিধানসভায় বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশের পর ওই জমি ও ভবনে ঠাকুরবাড়ির বংশধরদের আর কোনও অধিকার নেই।
প্রসঙ্গত, ঠাকুরবাড়ির যে সদস্য তাঁর ছেলের বিয়ের আর্জিতে চিঠি দিয়েছেন, তিনি সোমবার জানিয়েছিলেন যে ভিসি এ ব্যাপারে মৌখিক সায় দিয়েছেন। উপাচার্যও এই বক্তব্য খারিজ করেননি। মঙ্গলবার দুপুরে রেজিস্ট্রার অবশ্য জানান, উপাচার্য মৌখিক সম্মতি দেননি। এতেও অবশ্য বিতর্ক থামেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন নিজেদের ক্যাম্পাসে বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান নিয়ে ব্রাহ্ম সমাজের মতামত জানতে চাইবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কারণ, ব্রাহ্ম সমাজই নানা সময়ে ক্যাম্পাসে মাঘোৎসব ও ২৫ বৈশাখ পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়েছে বলে খবর। তৃণমূল কংগ্রেসের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার সহ-সভাপতি মণিশংকর মণ্ডলের বক্তব্য, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধরদের পূর্ণ সম্মান জানিয়েই বলছি, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি। তার উপর হেরিটেজ ভবন। সেটি কারও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের আর্জি অনভিপ্রেত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে তা নাকচ করা উচিত।’