এই সময়, কুলতলি: দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বহু মানুষ কলকাতা, দক্ষিণ শহরতলি, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়ায় পরিচারিকার কাজ করেন। অনেকে এই সব জায়গায় দিনমজুরের কাজ করতেও যান। তাঁদের কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে নকল সোনার মূর্তি ও সোনা বিক্রির টোপ দেওয়ার ফাঁদ পাততো সাদ্দাম সর্দার। সেই ফাঁদে পড়ে নিরীহ লোকজন তা কিনতে এলেই মোটা টাকা হাতিয়ে চম্পট দিত প্রতারকরা।কুলতলির ঘটনার তদন্তে নেমে এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। কুলতলির জালাবেড়িয়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পয়তারহাট গ্রামের সাদ্দাম সর্দার এই কাজে জড়িত থাকার কথা জানতে পেরেই সোমবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশের হাত থেকে সাদ্দামকে ছিনিয়ে নেয় বাড়ির মহিলারা।
পুলিশ জানিয়েছে, দিনের পর দিন মানুষকে এ ভাবে নির্জন এলাকায় ডেকে টাকা হাতানোর ছক ছিল সাদ্দামের। এ নিয়ে বহু অভিযোগ কুলতলি থানায় জমা পড়েছে। পুলিশের দাবি, কুলতলি থেকে কলকাতায় পরিচারিকা বা দিনমজুরের কাজ করতে যাওয়া লোকজনের কাছ থেকে ফোন নম্বর জোগাড় করত সাদ্দাম ও তার ভাই সাইরুল।
এর পর ফোন করে বলা হতো দুষ্প্রাপ্য সোনার মূর্তি ও সোনার গয়না কম দামে বিক্রি করা হবে। বেশ কিছুদিন ফোনে যোগাযোগ চালানোর পর বিশ্বাস অর্জন হলে কেউ কেউ ওই সোনা কিনতে রাজিও হতেন। তখন তাদের শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার জয়নগর-মজিলপুর স্টেশন থেকে সড়ক পথে নিয়ে আসা হতো কুলতলির পয়তারহাট গ্রামে। জায়গাটি নির্জন এবং নিরিবিলি।
অভিযোগ, সেখানে নিয়ে এসে তাদের মারধর করে টাকা হাতিয়ে চম্পট দিত প্রতারকদের দল। অনেক সময় পিতলের মূর্তিতে নকল সোনার প্রলেপ দিয়েও বিক্রি করেছে এরা। ২০ লক্ষ টাকার মূর্তি পাঁচ লক্ষ টাকায় বিক্রির কথা বলে ক্রেতাদের টোপ দিত তারা। এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিল সাদ্দাম ও সাইরুল।
কয়েক বছর ধরে এই চক্রে কাজ করে চলেছে ছাকাত আলি সর্দার, আয়েদ আলি সর্দার, উসমান লস্কর, রেজাউল সর্দার, জয়নান মোল্লা ও শাহজাহান সর্দারের মতো স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজন। কুলতলি থানার পুলিশ কয়েকবার অভিযোগের ভিত্তিতে এই চক্রের কয়েক জনকে গ্রেপ্তারও করে। কিন্তু কোনও ভাবে এই কাজ বন্ধ করা যায়নি।
পুলিশ জানায়, প্রতারণা করার পর কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে সবার মধ্যে ভাগ করা হতো। নিজেদের ব্যবসায় কোন্দলের কারণে বছর কয়েক আগে খুন হয়েছিল পয়তারহাট এলাকার বাসিন্দা সুরথ মণ্ডল নামে আরও এক নকল মূর্তির কারবারি। পুলিশ সেই খুনের ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করলেও পরে তারা জমিনে মুক্ত হয়।
সোমবার সাদ্দামের বাড়িতে পুলিশের অভিযানের সময় বাড়ির মেয়েরাই গ্রেপ্তারে বাধা দেয়। সাদ্দামের ভাই গুলি চালায় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় রাজনৈতিক রংও লেগেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের মদতে পুলিশের একাংশকে কাজে লাগিয়ে এই প্রতারণা চালাচ্ছিল সাদ্দাম ও তার দলবল।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে জালাবেড়িয়ার-২ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ইয়ামিন মিস্ত্রি বলেন, ‘এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। পুলিশ উপযুক্ত তদন্ত করে যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’