একে অপরের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্ত দাবি, শীর্ষ দুই তৃণমূল নেতার দাবি ঘিরে শোরগোল...
আজকাল | ১৮ জুলাই ২০২৪
আজকাল ওয়েবডেস্ক: রেজিনগর বিধানসভা এলাকায় সরকারি প্রকল্পে টেন্ডার ডাকার ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বুধবার রেজিনগরের বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বহরমপুর–মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রবিউল আলম চৌধুরি এবং বেলডাঙা–২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা বেলডাঙা–২পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সভাপতি বিউটি বেগমের স্বামী আতাউর রহমান একে অপরের বিরুদ্ধে সরব হলেন। সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জেলা তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন তাঁরা সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি করেছেন। পাশাপাশি দুই তৃণমূল নেতাই একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের সম্পত্তি বৃদ্ধির খতিয়ান নেওয়ার জন্য সিআইডি তদন্ত দাবি করেছেন।
তৃণমূল বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বেলডাঙা–২ ব্লকের ছটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে কর্মরত নির্মাণ সহায়করা এলাকায় আলো লাগানো এবং জল সরবরাহের কাজ করার জন্য টেন্ডারে এমন শর্ত রাখছেন যার ফলে স্থানীয় কন্ট্রাক্টররা কাজ করতে পারছেন না। আর এই কাজে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তাদের মদত দিচ্ছেন। বেলডাঙা–২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ওনার স্ত্রী। ওনারা চেষ্টা করছেন পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় অবৈধভাবে বিভিন্ন রকমের টেন্ডারের কাজ করতে। এক লাখ টাকার নীচের টেন্ডারের কাজ যাতে কেউ জানতে না পারে সেই কারণে তা নোটিশ ছাড়াই করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নির্মাণ সহায়ক আমাকে অভিযোগ জানিয়েছেন তাদেরকে ভয় দেখানো হয়েছে।’ তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘জানতে পেরেছি ওই তৃণমূল নেতা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন একটি জায়গায় কাজ না করেও আমি টেন্ডারের টাকা তুলে নিয়েছি। প্রশাসন এই অভিযোগ পেয়ে তিনবার তদন্ত করেও অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি। ওই তৃণমূল নেতার কাজের জন্য বেলডাঙা–২ ব্লক উন্নয়নের নিরিখে জেলাতে সবথেকে পেছনে পড়ে গেছে। তাদের মর্জিমতো টেন্ডার না হলেই তা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।’
তৃণমূল বিধায়ক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এই এলাকায় বেআইনিভাবে মাটি, বালির কারবার বা কোনও অবৈধ কাজ করতে দেব না। খুব শীঘ্রই দল ওই নেতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
তৃণমূল বিধায়ক আরও অভিযোগ করেন, ‘প্রায় ১ বছর আগে বেলডাঙা–২ পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত পাঁচটি ফেরিঘাটের ‘ইজারা’, টেন্ডার না ডেকে রেজুলিশন করে এক ব্যক্তিকে দিয়ে দিয়েছে। টেন্ডার ডাকলে পঞ্চায়েত সমিতির ৫০–৬০ লক্ষ টাকা আয় হত। তবে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে দ্রুত অনলাইন টেন্ডার করে ওই ঘাটগুলো নিলাম করতে হবে। ওই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি এলাকার রেশন ডিলারদের চাপ দিচ্ছেন তাঁর মনোমত কাজ করার জন্য।’
রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ওই প্রাক্তন ব্লক সভাপতির কত সম্পত্তি হয়েছে তার সিআইডি তদন্ত দাবি করছি। উনি পদে থাকাকালীন কত সম্পত্তি করেছিলেন তা রেজিনগরের মানুষের জানার দরকার রয়েছে।’ অন্যদিকে বেলডাঙা–২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির স্বামী আতাউর রহমান বলেন, ‘বেলডাঙা–২ ব্লকের অন্তর্গত ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও সদস্য বা পঞ্চায়েত সমিতির ২৫ জন সদস্যের কারও সঙ্গেই বিধায়কের কোনও যোগাযোগ নেই। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি টিকিট পাবেন কিনা তারও ঠিক নেই। যেহেতু রেজিনগরের তৃণমূল নেতা–কর্মীরা এখনও আমার কথাতেই চলেন তাই আমার বিরুদ্ধে বিধায়ক মিথ্যে অভিযোগ করছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় যে কাজ হয় তার টেন্ডার ওনারই কয়েকজন লোক পায়। একই ‘স্কিম’ দু’বার টেন্ডার করিয়ে উনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার প্রমাণও আমার কাছে রয়েছে।’
আতাউর বলেন, ‘উনি প্রায় ১৫ বছর ধরে বিধায়ক রয়েছেন। সাধারণ মানুষরা যে সঠিক পরিমাণে রেশনের মাল পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে কথা না বলে উনি রেশন ডিলার–ডিস্ট্রিবিউটরের হয়ে কথা বলছেন। এর কারণ কি সবাই জানে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিধায়ক এবং তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্ত হোক। ওনারা এই সরকারের আমলে এত টাকা, গাড়ি, বাড়ি কিভাবে করলেন তারও তদন্ত হওয়া দরকার।’