বৃষ্টি ধরলেও কাটছে না বিপদ! উত্তরে তিস্তার গর্ভে জাতীয় সড়কের বিরাট অংশ
প্রতিদিন | ১৮ জুলাই ২০২৪
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বৃষ্টি কিছুটা ধরেছে বটে কিন্তু বিপদ কাটছে না কিছুতে। উত্তাল তিস্তার ভয়ঙ্কর গর্জন শুনে বিনিদ্র রাত কাটছে। সেটাও দেড় মাস হয়েছে। ভোরে ঘরের বাইরে পা রাখতে রাস্তার উপর দিয়ে নদী বইতে দেখে আতকে উঠছে প্রাণ। কালিম্পংয়ের রংপো, মেল্লি বাজার, রবিঝোরা, লিকুবির, ২৯ মাইল, গেইলখোলা, সেলফিদারা এলাকার এটাই এখন রোজনামচা। এক অদ্ভুত জীবনযাত্রা।
ঘরবাড়ি কখন তিস্তা ভাসিয়ে নেয় নিশ্চয়তা নেই। সেই আতঙ্কে দু’চোখ এক হয় না রাজেন ছেত্রী, ভোজরাজ তামাং, দীপক খারেলদের। রংপো চেকপোস্ট এলাকার ওই বাসিন্দাদের কথায়, রবিবার বিকাল থেকে আকাশ নীল। অনেকদিন পর সোমবার থেকে রোদের দেখা মিলেছে। সিকিমে, কালিম্পংয়ে কথাও ভারী বৃষ্টি হয়নি। তবু তিস্তা উত্তাল। ভয়ঙ্কর গর্জন করে জাতীয় সড়কে ঝাপিয়ে পড়ছে। রাজেনবাবু বলেন, “রাতে পরিবারের সবাই একখানে শুয়ে থাকি। পালা করে রাত জাগি। তেমন বিপদ দেখলে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বাচতে তৈরি থাকি।” পাহাড়ে বৃষ্টি থেমেছে তবু কেন তিস্তা এতটা উত্তাল? ভয়ঙ্কর মারমুখী? নিচে নামতে ক্রমশ গিলেই চলেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক?
কালিম্পংয়ের রংপো চেকপোস্ট এবং ভোটে ভিড় এলাকায় সড়কের বিরাট অংশ নদীতে তলিয়েছে। দীপকবাবু বলেন, “রাত দশটার পর থেকে তিস্তার ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করে জাতীয় সড়কে। ভয়ঙ্কর শব্দ হয়েছে। সকালে দেখি রাস্তা গিলে তিস্তা বইছে।” ওই দৃশ্য দেখে দিশাহারা দশা হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। দীপকবাবু জানান, গত বছর হড়পা বানের পর পলি, বালি, পাথর জমে তিস্তা নদীবক্ষ কোথাও সাত ফুট আবার কোথাও প্রায় দশ ফুট উঁচু হয়েছে। সিকিমে সামান্য বৃষ্টির জল ধারণ করতে পারছে না নদী। তাই মারমুখী হয়ে উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে একমত কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা। তিনি বলেন, “সোমবার রাতে সিকিমের কোথাও ভারী বৃষ্টি হয়নি। কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। সেই জল নিচে নামতে তিস্তা উত্তাল হয়েছে। উদ্বেগজনকভাবে নাব্যতা কমে যাওয়ায় এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি হচ্ছে।”
বিপজ্জনক বলতে? তিস্তা যেভাবে এখনও মেল্লি খেলার মাঠের উপর দিয়ে বইছে তাতে মেল্লি বাজারের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বিপদ ঘনীয়েছে তিস্তা হয়ে সিকিম-দার্জিলিং রোডের। মঙ্গলবার ফের ওই রাস্তা তিস্তার জলে ভেসেছে। কিছুদিন আগে কালীঝোরা, গেইলখোলা, বিরিকদাড়া, ২৯ মাইল, লোহাপুলে রাস্তার কিছুটা অংশ ধসে তিস্তায় তলিয়েছে। বার বার প্লাবিত হয়েছে তিস্তা বাজার এলাকা। তবে ভয়াবহ পরিস্থিতি কালীঝোরা থেকে মেল্লি পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার রাস্তার। এখানে রবিঝোরা, লিকুবির, ২৯ মাইল, গেইলখোলা ভূমিধসে বিধ্বস্ত হয়েছে। পরিণতিতে শিলিগুড়ি-সিকিম যোগাযোগের ‘লাইফ লাইন’ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ দীর্ঘদিন থেকে।
তবে এই প্রথম নয়। চলতি বছরের ২৩ মার্চ থেকে ১১ বার ভূমিধসে অবরুদ্ধ হল ওই জাতীয় সড়ক। এবার যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে কবে খুলবে কেউ জানে না। তার উপর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ২০ জুলাই থেকে ফের পাহাড়-সমতলে শুরু হতে পারে ভারী বর্ষণ। বিধ্বস্ত দশা কাটিয়ে না উঠতে ফের ধাক্কা এলে কি পরিস্থিতি হতে পারে সেটা ভেবেই অস্থির বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। শিলিগুড়ি থেকে সিকিম পর্যন্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্য ১৭৪ কিমি। ওই পথেই রয়েছে ভূমিধস প্রবণ মেল্লি, রবিঝোরা, লিকুবির, ২৭ মাইল, সেলফিদারা। চিত্রে থেকে শ্বেতীঝোরা, রংপো চেকপোস্ট, ২৯ মাইল সহ কিছু জায়গাও বিপজ্জনক। দেড়মাসে এলাকাগুলো ভূমিধসে বারবার বিধ্বস্ত হয়েছে। স্বভাবতই রুট ঘুরিয়ে যান চলাচল করেছে। কিন্তু সেটাও ব্যাহত হয়েছে।