রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশে’র বিরোধিতা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এহেন মন্তব্য ঘিরে দলের অন্দরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তড়িঘড়ি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সাফ কথা, ব্যক্তিগত মতামত, দল সমর্থন করে না। বিজেপি সবার জন্য কাজ করে। শুভেন্দুর মন্তব্যের ব্যাখা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন শমীক ভট্টাচার্যও। সবমিলিয়ে দলের অন্দরে ফের একবার প্রকট হল শুভেন্দু-সুকান্ত দ্বন্দ্ব। বিষয়টি কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল।
বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সুকান্ত বলেন, “এবিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন। এব্যাপারে আমাদের স্থান পরিষ্কার। আমরা একসাথে সকলের পাশে, সকলের জন্য আছি। বিজেপি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য আছে।” সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়া মন্তব্য প্রসঙ্গে তাঁর মত,”অনেক নেতাই প্রস্তাব দেন। উনি ডেলিগেট হিসেবে বলেছেন। পার্টি তার নিজের লাইনে চলে। কেউ কিছু বলতেই পারে। সব প্রস্তাব গৃহীত হয় না।” সুকান্তর আরও সংযোজন, ” আমাদের পার্টিতেই আছে সংখ্যালঘু মোর্চা। বিজেপি মনে করে সংখ্যালঘু মোর্চার কর্মীরা আমাদের সম্পদ।”
একই কথা শোনা গেল বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ তথা মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের গলাতেও। তিনি বলেন, “বিজেপি কোনও বিশেষ সম্প্রদায়কে নিয়ে রাজনীতি করে না। আমাদের রাজনীতি জাতীয়তাবাদী মুসলমানদের নিয়ে। যারা এদেশকে অপবিত্র বলে মন্তব্য করে দেশ ছেড়ে যাননি। তাদের জন্য নরেন্দ্র মোদি আছেন, থাকবেন।” তাঁর আরও দাবি, “শুভেন্দু অধিকারী আবেগের বশবর্তী হয়ে বলেছেন, তার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই দিয়েছেন।”‘
কী বলেছিলেন শুভেন্দু? তাঁর কথায়, “আমিও বলেছি রাষ্ট্রবাদী মুসলিম। আপনারাও বলেছেন, সব কা সাথ, সব কা বিকাশ। আর বলব না।” এর পর আবার সুর চড়িয়ে শুভেন্দুর বার্তা, “বলব, হামারি সাথ হাম উনকা সাথ। সব কা সাথ, সব কা বিকাশ। বন্ধ করো।” শেষে সংযোজন, “সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দাও।” কেন তিনি এহেন মন্তব্য করলেন? ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের দখল নিয়েছে তৃণমূল। মেরুকরণ বুমেরাং হয়েছে বিজেপিতে। তাই বলতে হল সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দাও।” স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এহেন মন্তব্য ঘিরে দলের অন্দরেই জলঘোলা শুরু হয়। পরে অবশ্য তাঁর ব্যাখ্যা, “ভুল প্রেক্ষাপটে আমার মন্তব্য বিচার করা হচ্ছে। আমি রাষ্ট্র ও রাজ্য বিরোধীদের কথা বলতে চেয়েছিলাম।”
এপ্রসঙ্গে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি চার্লস নন্দী বলেন, “এটা শুভেন্দুদার ব্যক্তিগত মত হতে পারে। দলের মত নয়। মোদিজির নেতৃতে সব কা সাথ, সব কা বিকাশ স্লোগানে আমরা কাজ করছি। ভোটের জন্য নয়,পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের কাছে সেবার জন্য যেতে বলেছেন মোদিজি।” তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “সব দলের সংখ্যালঘু মোর্চা থাকে। বিজেপি গণতান্ত্রিক দল হলে ওদেরও সংখ্যালঘু মোর্চা থাকত। কিন্তু ওরা সেটা তুলে দেওয়ার কথা বলছে।”