• পাড় ভাঙছে গঙ্গার নিদ্রাহীন সামশেরগঞ্জ
    বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সামশেরগঞ্জ: বাড়ির দরজা থেকে নদীর ভয়ঙ্কর স্রোত দেখতে পাচ্ছি। প্রতিদিন জল বাড়ছে গঙ্গায়। স্রোতের গর্জনে রাতে ঘুম আসে না। খুব আতঙ্কে থাকি। এই বুঝি সব ভেঙে বাড়ি ঘর সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেল। সামশেরগঞ্জের মহেশটোলার বাসিন্দা শ্যামল সরকার চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন। ঝুপঝাপ শব্দে পাড়ের মাটি পড়ছে নদীর জলে। পাড়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেই ভয় পাচ্ছেন বাসিন্দারা। গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটির অধিকাংশই জলের তলায়। কিছুটা ঝুলে আছে নদীর পাড়ে। সেই রাস্তা দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত চলছে। এবার ভাঙনে রাস্তার আর কোনও অংশের অস্তিত্ব থাকবে না বলেই আশঙ্কা এলাকাবাসীর।


    বর্ষার শুরু থেকেই ক্রমাগত গঙ্গার জলস্তর বাড়ছে। নদীর কিনারে ঝুলছে সামশেরগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দারা ফের আশঙ্কায় রয়েছেন। নদীর স্রোত দেখে ঘুম উবেছে সকলের। এই জলস্তর নামার সময়ই প্রতিবছর ঘটে ব্যাপক বিপর্যয়। একের পর এক পাড় গিলে ফেলে গঙ্গা। প্রতাপগঞ্জ, মহেশটোলা এলাকার বহু জমি ও বাড়ি আজ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এলাকার মানুষের একটাই দাবি, ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান। 


    জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা বলেন, সামশেরগঞ্জের গঙ্গা ভাঙন একটা বড় সমস্যা। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভাঙন রোধের স্থায়ী সমাধানের জন্য বরাবর চেষ্টা করছেন। জেলা সফরে এলেই তিনি ভাঙনের জন্য প্রচুর অর্থ ও প্যাকেজ ঘোষণা করেন। সেই অর্থ দিয়েই কাজ চলছে। তবে এত বড় নদীর ভাঙন ঠেকাতে কেন্দ্রের সদিচ্ছার প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকার বরবারই এই ভাঙন নিয়ে উদাসীন। বালির বস্তা ফেলে বিপজ্জনক এলাকার পাড় বাঁধানোর কাজ আমাদের সরকারই করছে। 


    মহেশটোলার বাসিন্দা রঞ্জিত সরকার বলেন, ভাঙন রোধের জন্য স্থায়ী সমাধান দরকার। এভাবে বালির বস্তা দিয়ে এত বড় নদীর পাড় ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এবার আমাদের চোখের সামনে হয়তো বাড়িটা জলে চলে যাবে। কতদিন এভাবে বাঁচব? অপর এক বাসিন্দা বলেন, আমার বাড়ি থেকে মাত্র ২০ হাত দূরে নদী। ঘরের দরজা থেকে স্রোত দেখছি। জল বাড়ছে। প্রচণ্ড স্রোত। আতঙ্কে আছি সবাই। ঝুপঝাপ করে মাটি ধসে পড়ছে নদীতে। জলের গর্জন বাড়ছে। বড় অংশের ভাঙন শুরু হলেই একসঙ্গে ২০-২৫টি বাড়ি জলে চলে যাবে। বর্ষা এসে গেলেও এবছর এখনও পর্যন্ত সেভাবে জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় আসতে দেখিনি। 


    স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলেন, মহেশটোলায় রাস্তার ওপারে ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি আছে। সেগুলি আগে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এবার রাস্তাটাও পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। ৭০ শতাংশ রাস্তা গতবারই জলে চলে গিয়েছে। কিছু জায়গায় সরু হয়ে ঝুলে আছে। রাস্তা বাঁচানোর জন্য কিছু কিছু জায়গায় বালির বস্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বালির বস্তা ওপার থেকে এনে ধারে ধারে দিচ্ছিল। এখন জল বেড়ে যাওয়ায় সব জায়গায় বস্তা ফেলতে পারছে না। মাঝে বালি না পাওয়া যাওয়ায় বস্তায় করে মাটি নিয়ে এসে ফেলেছে। শিকদারপুর ও লোহারপুর এলাকায় এখনও বস্তা ফেলা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে বস্তা দিয়েছে, তাতে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়।
  • Link to this news (বর্তমান)