এবার বাজারে আসছে টেরাকোটা শিল্পীদের তৈরি পোড়ামাটির রাখি
বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
উজ্জ্বল পাল, বিষ্ণুপুর: এবার পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্পীদের হাতে তৈরি পোড়ামাটির রাখি বাজারে আসতে চলেছে। ওই রাখিতে বিষ্ণুপুর এবং মুকুটমণিপুরের পর্যটনের নানা নিদর্শন তুলে ধরা হচ্ছে। এক কথায় ভাতৃত্বের বন্ধনে পর্যটনের প্রসার ঘটাতে চাইছেন শিল্পীরা। টেরাকোটার রাখি বেশ পছন্দ হয়েছে বিষ্ণুপুর ও খাতড়া মহকুমা প্রশাসনের। তাদের তরফে কয়েক হাজার রাখির বরাতও পেয়েছেন শিল্পীরা। রাখির ডিজাইন করেছেন তালডাংরার বাসিন্দা বিকাশ কুম্ভকার। হাতে আর বেশি সময় নেই। তাই শিল্পীরা দিনরাত পরিশ্রম করে কাঁচা মাটির উপর ছাঁচে আঁকা পর্যটন কেন্দ্রের নানা ছবি পোড়ামাটির অপূর্ব রঙে ফুটিয়ে তুলছেন। বাড়ির মহিলারাও রাখি তৈরিতে হাত লাগাচ্ছেন।
বিকাশবাবু বলেন, প্রতিবছর বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাখি কিনতে পাওয়া যায়। তবে টেরাকোটার রাখি সম্ভবত এই প্রথম তৈরি করা হচ্ছে। সৌভাতৃত্বের বন্ধনের রাখি উৎসব পালন করা হয়। হাজার হাজার মানুষ ওইদিন একে অপরের হাতে রাখি পরান। কিন্তু তার মধ্যে বিশেষত্ব থাকে না। হাতে পরে থাকা রাখির মধ্যে দুই পর্যটন কেন্দ্রের প্রচারের কথা মাথায় রেখে আমি টেরাকোটার রাখির ডিজাইন বানাই। এই রাখি অনেকটা পোড়ামাটির গহনার মতো। সেটা সকলেরই ভীষণ পছন্দ হবে। বিষ্ণুপুর ও খাতড়া দুই মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার রাখি সরবরাহের বরাত পেয়েছি। পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্পীরা তা তৈরি করছেন।
পাঁচমুড়ার মৃৎশিল্পী পঞ্চানন কুম্ভকার বলেন, গোলাকৃতি, চৌকো আকৃতির মাটির রাখি তৈরি করছি। প্রতিটি রাখিতে বিষ্ণুপুর অথবা মুকুটমণিপুরে পর্যটনের বিভিন্ন নির্দশন ছাঁচে ফেলে তৈরি করা হয়েছে। পাঁচমুড়ার ঘোড়া ছাড়াও বিষ্ণুপুরের মধ্যে জোড়বাংলো, দলমাদল কামান, লালবাঁধ, রাসমঞ্চ প্রভৃতির ছবি রয়েছে। মুকুটমনিপুরের ক্ষেত্রে নৌকাবিহার, হরিণ পার্ক, জলাশয় প্রভৃতির ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হাতে বাঁধার জন্য প্রতিটি রাখিতে সৃদশ্য ডোর দেওয়া হয়েছে।
বিকাশবাবু বলেন, খোলা বাজারেও টেরাকোটার রাখি পাওয়া যাবে। দামও খুব বেশি নয়। মাত্র ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকা পর্যন্ত দামে জেলার বিভিন্ন বাজারে তা কিনতে পাওয়া যাবে।
পাঁচমুড়ায় মৃৎশিল্পী পঞ্চানন কুম্ভকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির মেঝে, উঠোনে গোলাকৃতি, চৌকো প্রভৃতি ডিজাইনের পোড়ামাটির জিনিস ছড়িয়ে রয়েছে। তাতে দুই দিকে দু’টি ফুটো করা হয়েছে। বাড়ির মহিলারা রঙিন নানা ডিজাইনের সূতো বাঁধছেন। কেউ বা তা প্যাকেটে ভরছেন। পঞ্চাননবাবু বলেন, বিকাশবাবুর তৈরি করা পর্যটনকেন্দ্রিক বিভিন্ন জিজাইনের আদলে প্রথমে ছাঁচ তৈরি করা হয়েছে। এরপর তা দিয়ে বিভিন্ন আকৃতির কাঁচা মাটির উপর ছবি তৈরি করা হয়েছে। ঘরের মধ্যে শুকিয়ে পরে ভাটিতে পোড়ানো হয়েছে। ভীষণ শক্ত। এগুলি সহজে ভাঙবে না। তাই পরিবহণের ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা হবে না।