সংবাদদাতা, বোলপুর: ঐতিহ্যবাহী শহর বোলপুর- শান্তিনিকেতন। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতিও এক বছর হতে চলেছে। এই সম্মান, শহরের ঐতিহ্যের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়েছে। কিন্তু বেহাল রাস্তাঘাটের পাশাপাশি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জমছে নোংরা ও আবর্জনা স্তূপ। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়মিত হয় না সাফাই অভিযান। সত্যিই কি তাই? পুরসভার অবশ্য দাবি, সাফাই হয় নিয়মিত। কিন্তু কিছু অসচেতন নাগরিকও এই আবর্জনা ছড়ানোর জন্য দায়ী। নির্দিষ্ট ডাস্টবিন থাকতেও, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার কারণে শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নোংরার স্তূপ। এর থেকেই ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। যার জেরে নাকাল অবস্থা সবার। বিশেষত স্কুল যাওয়ার রাস্তাগুলো নোংরা ছড়িয়ে থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভোগান্তি চরমে। বর্ষার জলে সেই নোংরা মিশছে রাস্তায়। শহরকে পরিষ্কার রাখতে এবার কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বোলপুর পুরসভা।
স্কুলবাগানের ডাকবাংলো ময়দানের পাশের রাস্তা, বিশ্বভারতীর বড়বাঁধ সংলগ্ন গুরুপল্লি যাওয়ার রাস্তা, স্টেশন সংলগ্ন হাটতলা, মকরমপুর, জামবুনি প্রভৃতি জায়গায় আবর্জনা স্তূপ বেড়েই চলেছে। স্কুলবাগানের ওই রাস্তা দিয়েই বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বোলপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যাল,য় বোলপুর কলেজ সহ অন্যান্য প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াত করে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাস্তাটি এতটাই নোংরা যে, চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। একইভাবে গুরুপল্লির সংশ্লিষ্ট রাস্তাটি ব্যবহার করে বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। দুর্গন্ধের কারণে প্রায় ১০০ মিটার নাক চেপে যাতায়াত করতে হয় বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীদের দাবি সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে নেই ডাস্টবিন। তাই ওই জায়গাগুলিতেই আবর্জনা ফেলতে হয়। কিন্তু পুরসভার দাবি, প্রতিদিন সকালে প্রতিটি ওয়ার্ডেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে নোংরা আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। তাহলে প্রশ্ন এই নোংরা আবর্জনা জমছে কী ভাবে?
সাফাই কর্মীদের দাবি নির্দিষ্ট সময়ে আবর্জনার গাড়িতে ময়লা ফেলতে অনেকেই ভুলে যান। সেগুলি বাড়িতে দুর্গন্ধ ছড়ায় বলে বাড়ির আশেপাশে ডাস্টবিনে তারা ফেলে দেন। এমনকী, অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্টও দুর্গন্ধযুক্ত খাবার এই ডাস্টবিনগুলোতে ফেলে। এই দুর্গন্ধের চোটে বাসিন্দারা নির্দিষ্ট জায়গায় না ফেলে দূর থেকেই ডাস্টবিনের কাছাকাছি ফেলে দেন। এভাবেই নোংরা আবর্জনা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। তাই শহরকে পরিষ্কার রাখতে এবার কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে বোলপুর পুরসভা। এই নোংরা আবর্জনার ফলে বর্ষাকালে ড্রেন বুজে গিয়ে রাস্তায় জল জমা প্রতিবছর বর্ষায় সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিকারে এবার হাইড্রেনে নোংরা আবর্জনা ফেললে জরিমানা আদায় করা হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বসানো হবে ডাস্টবিন। নির্দিষ্ট জায়গায় যাতে আবর্জনা ফেলা হয় তার নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরাও বসানো হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ। তিনি বলেন, শহরকে পরিষ্কার রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। তাই এবার থেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নোংরা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে কিনা, তার জন্য এই ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে। কেউ সেই নির্দেশ না মানলে প্রাথমিকভাবে জরিমানা করা হবে। তারপরেও যদি প্রতিকার না হয়, সেক্ষেত্রে আইন মেনে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে পুরসভা।