• প্রচারে উদাসীন প্রশাসন, বেহাল বোলপুরের বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার
    বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বোলপুর: সামনে রবীন্দ্রনাথের এক বিশাল অবয়ব মূর্তি। আর তার পিছনে ৫০ একর জায়গাজুড়ে চোখ ধাঁধানো সব ছোট ছোট কটেজের মতো ঘর। বাইরে লোহার দরজার সর্বক্ষণই তালা দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে বোলপুরের শিবপুরের বাইপাসে বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার তৈরি করেছিলেন। যেখানে ‘শিল্পগ্রাম’-এর মতো ক্ষুদ্র বিভিন্ন ধরণের হস্তশিল্পীরা বিকিকিনি করতে পারেন। কিন্তু সাজানো গোছানো বাজার হলেও প্রচার না থাকায় কাকপক্ষীও আসে না এই ক্ষুদ্র বাজারে। বিশ্বের দরবারে শান্তিনিকেতনের হস্তশিল্পকে পৌঁছে দেওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টা এখন অথৈ জলে! স্রেফ, প্রচারের অভাবে ধুঁকছে কটেজগুলি। 


    দক্ষিণ ভারতের ‘শিল্পগ্রামের’ আদলে তৈরি বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজারের দরজার গেটে দাঁড়িয়ে দারোয়ান। পরিচয় দিতে তিনি ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিলেন। গোটা এলাকায় বাঁধানো ঝাঁ চকচকে রাস্তা। দু’ধারে ছোট ছোট অপূর্ব কটেজগুলি। প্রতিটিতে পৃথক পৃথক নম্বর লেখা। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, পর্যটকদের থাকার সমস্ত রসদ ঠাসা। আসলে, ব্যাপারটা তা নয়। কমপক্ষে ৫০টি কটেজে থাকার কোনও বন্দোবস্ত নেই। এর মধ্যে ২৫টি হস্তশিল্পীদের হাতে গিয়েছে। বাকি প্রায় ২৫টি খালি পড়ে। 


    কথা হচ্ছিল একজন কাঁথাস্টিচ হস্তশিল্পী বিধান মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘২০২০ সাল নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী দীঘার সভা থেকে এই শিল্পগ্রামের উদ্বোধন করেন। আর আমরা শিল্পীরা ১৫ বছরের লিজে ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা করে দিয়েছিলাম কটেজ পাওয়ার জন্য। কিন্তু লোকজন তো কেউ আসে না! গত দু’বছর ধরে বছরে একবার করে কেবল মেলা বসছে। ব্যাস এটুকুই! আর তো কোনও প্রচার নেই। কত স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছিলাম!’ হতাশার সুর বিধানের গলায়। 


    মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন-শিল্পগ্রামের স্টল নিয়ে বিধানের মতো আরও অনেকেই বেকায়দায় পড়েছেন। লোকজনের সমাগম নেই। বিক্রিবাটা নেই। সারাদিন হা-পিত্যেস হয়ে বসে থাকা। অথচ, কটেজগুলিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পরিষেবা দেওয়ার সব পরিকাঠামোই সম্পূর্ণ। প্রতিটি কটেজেই শৌচাগারও রয়েছে। একেবারে পরিকল্পনামাফিক বানানো। প্রশাসনের উদাসীনতায় সবকিছু এখন জলাঞ্জলি। স্থানীয় মানুষজনই জানেনই না এত চোখ ধাঁধানো কটেজগুলি আসলে কী! ক্ষুদ্রশিল্প দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশও এই নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের কেউ কেউ চাইছেন, সরকারি ভাবে এই বাজারটিকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা হোক। কটেজ-ক্যাম্পাসের ভেতরে যেসব জায়গা ফাঁকা রয়েছে, সেখানে বাইরে থেকে শিল্পীদের বসিয়েও যেন পর্যটক টানা হয়। কটেজ পাওয়া হস্তশিল্পীদেরও দাবি, সরকারি মদতে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। বাংলার লোক-উৎসব সেগুলির মধ্যে অন্যতম। ওইসব উৎসব  বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজারের ভেতর করা হোক। তবেই বাঁচানো সম্ভব এত বড় মাপের প্রকল্পটিকে। পরিধি বাড়বে বোলপুর শহরেরও। পর্যটকরা শহরে ঢোকার মুখেই কেনাকাটার সুযোগ পাবেন। অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে। তবে, জেলা শিল্পদপ্তরের দাবি, বছরে একটা মেলা করে বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজারকে নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। দপ্তরের মন্ত্রী তথা খোদ বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, ‘খুব শীঘ্রই এই নিয়ে আমরা বৈঠকে বসতে চলেছি। আশপাশের এলাকায় যে সব জটিলতা ছিল, তা কাটিয়ে উঠেছি। বেশকিছু পরিকল্পনা এবার আমরা করব।’
  • Link to this news (বর্তমান)