অসীম দত্ত, শিলিগুড়ি: জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি সংযোজনের অভিযোগ উঠল। শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে কাওয়াখালিতে স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য উপনগরী তৈরিতে নির্দিষ্ট এসজেডিএ’র একটি প্রকল্পের জমিতে জেলা পরিষদের জমি সংযোজন ও বিল্ডিং প্ল্যান পাশের অভিযোগ সামনে এসেছে। আর এ ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্য সরকারের তরফে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদকে শোকজের চিঠি ধরানো হয়েছে। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এদিকে, রাজ্যের চিঠি পেয়ে পরিষদের এক আধিকারিক কলকাতায় গিয়েছেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে এসজেডিএ কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কোনও আধিকারিকই মুখ খুলতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি, সবটাই নবান্ন মনিটরিং করছে।
অভিযোগ, রাজ্য সরকারের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এবং এসজেডিএ’কে অন্ধকারে রেখে জমি সংযোজন ও বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করিয়েছে জেলা পরিষদ। এনিয়ে অবশ্য জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মনের সাফাই, তাঁকে না জানিয়েই ঘটনাটি হয়েছে। এই সংক্রান্ত কোনও ফাইল তাঁর টেবিলে আসেনি। ওই ফাইল এডিএম (জেলা পরিষদ) ও ইঞ্জিনিয়ারদের টেবিল থেকেই চলে যায়। সভাধিপতির দাবি, ‘বিষয়টি নিয়ে জট তৈরি হওয়ার পর আমার নজরে আনা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জমি সংক্রান্ত কোনও বিষয় কিংবা বিল্ডিং প্ল্যান সংক্রান্ত কিছু থাকলে বোর্ডের সদস্যরা মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেব। শোকজের ব্যাপারেও আমি অন্ধকারে। তবে আমাদের এক আধিকারিক আচমকা ছুটি নিয়ে কলকাতায় গিয়েছেন।’ ২০১৩ সালে শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে তৃতীয় মহানন্দা সেতুর কাছে জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ি-১ পঞ্চায়েতের কাওয়াখালিতে এসজেডিএ একটি সংস্থাকে ইডব্লুএস স্কিমে ৮১.১৯ একর জমি ৯৯ বছরের লিজে দেয়। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখ সেই জমির মাস্টার প্ল্যান করে দেয় এসজেডিএ। সেই প্ল্যান মোতাবেক টাউনশিপ নির্মাণ করার কথা। পাশাপাশি জমিতে সবুজায়ন, হাসপাতাল সহ অন্যান্য পরিষেবামূলক প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলার কথা ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু আচমকা ২০২৩ সালে ইডব্লুএস স্কিমে টাউনশিপের বদলে সেই জমি সংযোজন করে বাণিজ্যিক প্রজেক্ট করার আবেদন জানায় ওই সংস্থা। সেই মর্মে জমির চরিত্র বদলের আর্জি জানিয়ে চিঠি দেয় এসজেডিএ’কে। তবে সেই সংস্থার আর্জি ২০২৩ সালে ৯ অক্টোবর পত্রপাঠ খারিজ করে দেয় এসজেডিএ। জানিয়ে দেওয়া হয়, ২০২০ সালের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। না হলে কাজ আটকে যাবে। অবশেষে ওই সংস্থা জেলা পরিষদের দ্বারস্থ হয়। অভিযোগ, এরপরই এবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে ওই জমিতে চারটি পৃথক প্লটের সংযোজন করে দেয় জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। পাশাপাশি বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করে দেওয়া হয়। জেলা পরিষদ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে সংস্থার তরফে জমিতে অন্য প্রোজেক্টের কাজ শুরু হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ২২ মে এনজেপি থানার পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে ওই জায়গায় গিয়ে সংস্থার কাজ বন্ধ করে দেয় এসজেডিএ। বিষয়টি রাজ্যের নজরে আসে। এরপরই নবান্ন শোকজের চিঠি ধরিয়েছে।