পরিষেবা না দিলেই পদ যাবে পুর চেয়ারম্যানের, একুশের মঞ্চ থেকে বার্তা দেবেন মমতা
বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: পুরসভাগুলির কাজকর্মে তিনি যে সন্তুষ্ট নন, সম্প্রতি তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেগতিক বুঝে সর্বত্র চেয়ারম্যান, কাউন্সিলাররা পুর-পরিষেবার হাল ফেরাতে তৎপর হয়েছেন। তবে তৃণমূল সূত্রে খবর, পুর-চেয়ারম্যানদের জন্য আরও কড়া বার্তা অপেক্ষা করছে এবং নেত্রী তা শুনিয়ে দেবেন ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকেই। জানিয়ে দেবেন, হয় জনগণকে পরিষেবা দিন, নয়তো সরিয়ে দেওয়া হবে পদ থেকেই। প্রথমে ‘সংযত’ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তাতে কাজ না হলেই ‘ওষুধ’ বদল!
এই মুহূর্তে রাজ্যের পুরসভাগুলির মধ্যে একমাত্র তাহেরপুর রয়েছে বিরোধীদের হাতে। এছাড়া, ঝালদা পুরসভার বোর্ড গঠন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। রাজ্যের বাকি পুরসভাগুলি তৃণমূলের হাতে রয়েছে। অর্থাৎ স্থানীয় উন্নয়ন, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও পরিষেবা প্রদানের মূল চালিকাশক্তি জোড়াফুল শিবিরের জনপ্রতিনিধিরাই। অথচ এই জনপ্রতিনিধিদের একাংশের কাজকর্মে দলকে চরম অস্বস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। কোথাও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ, কোথাও আবার কাউন্সিলার নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলের একাধিক গোষ্ঠীর কোন্দল তো লেগেই আছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলারদের একাংশের সক্রিয় মদতে কিছু স্বঘোষিত তৃণমূল নেতার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। আইনকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাঁদের বিলাসবহুল বহুতল উঠে গেলেও জানেনই না সংশ্লিষ্ট পুরসভার চেয়ারম্যান। দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় বেশিরভাগ শীর্ষনেতার মত, ‘প্রোমোটার-রাজ’ নিয়ে চেয়ারম্যানরা চোখ বুজে থাকতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো জনপ্রতিনিধিদের আচরণ ও কাজের ‘পাঠ’ দেবেন বলে তৃণমূল ভবন সূত্রে খবর।
তৃণমূলের সাংগঠনিক পর্যালোচনায় সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলাফল নিয়েও বিস্তারিত চর্চা হয়। এই নির্বাচনে তৃণমূল সার্বিকভাবে ব্যাপক সাফল্য পেলেও শহরাঞ্চলে তাদের ভালো ফল হয়নি। রাজ্যের ৬৯টি পুরসভা এলাকায় বিরোধীরা এগিয়ে রয়েছে। এর দায় পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে কাউন্সিলারদের বলেই মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। কারণ, ফল প্রকাশের পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, বছরভর মানুষের পাশে থাকতে পারলে ভোটের সময় মানুষও সঙ্গে থাকবে। তাই সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া বা আত্মতুষ্টি নয়, বরং দলকে আরও কঠিন শৃঙ্খলায় কীভাবে সঙ্ঘবদ্ধ করা যায়—সেই বার্তা দেবেন মমতা। একাধিক তৃণমূল নেতা বলছেন, দলকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার এখনই উপযুক্ত সময়। পোড় খাওয়া জননেত্রী তা ভালোভাবে জানেন বলেই এখনই তিনি দলের অন্দরে জোরদার ঝাঁকুনি দিতে চাইছেন। এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘এবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে সমস্ত নেতাকর্মীকে সংযত ও জনমুখী হওয়ার বার্তা দেবেন নেত্রী। তিনি জানিয়ে দেবেন, যাঁরা কেবল নিজের স্বার্থসিদ্ধি করছেন, তাঁদের ছেঁটে ফেলতে দ্বিধাবোধ করবে না দল।’ কলকাতা লাগোয়া এক পুরসভার মেয়রের ভূমিকা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে খবর। সমাবেশ মিটলে রদবদল হতে পারে।
এদিকে, বিজেপির দু’জন সাংসদ ওই মঞ্চেই যোগদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের দাবি। তাঁদের বলা হয়েছে, সদ্য লোকসভা ভোট গিয়েছে। আপাতত তাঁরা বিজেপিতে থেকেই তৃণমূলকে খবর দিতে থাকুন।