• ইস্ট বেঙ্গলের মশালে জড়িয়ে সত্যাগ্রহ, মোহন বাগানের বাঘ বদলেছে নৌকায়
    বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
  • অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: আইএফএ শিল্ডজয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘটনায় মোহন বাগান ক্লাবের সঙ্গে ব্রিটিশদের সঙ্গে টক্করের নানা গৌরবময় ইতিহাস অনেকেরই জানা। তবে, ইস্ট বেঙ্গলের জ্বলন্ত মশালের লোগোর সঙ্গেও যে ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসের একটি অধ্যায় সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে, তা অনেকের জানা নেই। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবকে ব্রিটিশ পরিচালিত ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ যে বঞ্চনা করেছিল, তার মূলেই লুকিয়ে রয়েছে এই লোগোর ইতিহাস। ময়দানি ফুটবল ডার্বির শতবর্ষের সূচনায় মোহন বাগানকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ইস্ট বেঙ্গল। তবে, লাল-হলুদ ক্লাবটির কাছে তার চেয়েও বড় সুখবর হল, লোগোর ইতিহাস এবার জানবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়ারা। শারীর শিক্ষা বিষয়ের পাঠ্যে সেই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।


    ১৯২৮ সালে ইস্ট বেঙ্গলের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচজন খেলোয়াড় ইংরেজ শাসিত রেলওয়ের চাকরির জন্য ক্লাবের হয়ে খেলতে পারেননি। সেই সময় দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে যায় ইস্ট বেঙ্গল। ১৯৩০ সালে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদের জোয়ার ওঠে। ইংরেজদের সংস্থা আইএফএ পরিচালিত কলকাতা ফুটবল লিগ বয়কট করে ভারতীয় ক্লাবগুলি। এই পরিস্থিতিতে আইএফএ প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। প্রথম ডিভিশনের যে ক্লাব এগিয়ে ছিল, তাদের চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে আইএফএ। দ্বিতীয় ডিভিশনে এগিয়ে ছিল ইস্ট বেঙ্গল। তাদের কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়নি। এর প্রতিবাদে আইএফএ অফিসের সামনে কাগজের জ্বলন্ত মশাল নিয়ে জড়ো হন বহু সমর্থক। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হয়, ক্লাবের লোগো হবে জ্বলন্ত মশাল।


    বইটির সম্পাদক দ্বীপেন বসু বলেন, ‘ক্লাবগুলি ঘুরে এরকম নানা অজানা বা বিস্মৃত তথ্যগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে। যেমন মোহন বাগান ক্লাবের লোগো এখন পালতোলা নৌকা হলেও আগে তা ছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। দলের নামও পরিবর্তন হয়েছে। আবার মহমেডানের জার্সি সাদা-কালো হলেও তাদের লোগো যে সবুজ রঙের, তাও অনেকের অজানা। সেসব তথ্য রয়েছে বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ে।’ ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, ‘এটা অতিউত্তম উদ্যোগ। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এই ক্লাবগুলির সঙ্গে স্বাধীনতার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, তা ছাত্রছাত্রীরা জানুক। আরও আগে হলে আরও ভালো হতো।’ একই সুর মোহন বাগান সচিব দেবাশিস দত্তের গলাতেও, ‘এরকম একটি উদ্যোগের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। ক্রীড়াক্ষেত্রে ক্লাবগুলির অবদান এখনকার প্রজন্ম জানে না। সেই পরিস্থিতি এবার পাল্টাবে। আমাদের প্রস্তাব মাধ্যমিকেও এই ইতিহাস আনা হোক। তাহলে এই বিষয় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়া ১ লক্ষ ২০ হাজার ছাত্রছাত্রীই নয়, ১০ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর কাছে পৌঁছে যাবে এই ইতিহাস।’
  • Link to this news (বর্তমান)