শোভাবাজার চড়কাণ্ড: ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ‘এলাকার চাঁদা’ তুলত দুই গোষ্ঠীই
বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দুর্গা-কালী-সরস্বতী-শীতলা পুজো করলে চাঁদা চান পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু ‘এলাকার চাঁদা’! খাস কলকাতায় এ ঘটনা ঘটছে শুনে চোখ কপালে সকলের।
শোভাবাজার, বিকে পাল অ্যাভিনিউর বৈধ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এলাকার চাঁদা কথাটি প্রতিমাসে শুনতে হয় তাঁদের। একবার নয় মাসে দু’বার শুনতে হয়। ব্যবসায়ীরা নিজেদের নাম বলতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে বললেন, ‘এলাকার চাঁদা নিতে মাসে একবার আসেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলারের অনুগামীরা। তার কিছুদিন পর আসেন যুব গোষ্ঠীর নেতারা। দুই গোষ্ঠীকেই চাঁদা দিতে হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই দুই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বেআইনি সাট্টা-জুয়ার ঠেক চালাচ্ছে। সেখান থেকে নিয়মিত টাকা তোলে তারা। বিভিন্ন রাস্তায় বেআইনি পার্কিংও করাচ্ছে। এমনকী বৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও প্রতিমাসে এলাকার চাঁদা নিচ্ছে অনেকটা হিন্দি সিনেমায় দেখা, ‘গুন্ডা ট্যাক্স’এর আদলে। এই ওয়ার্ডে থাকা বিকে পাল অ্যাভিনিউর প্রায় সমস্ত দোকান থেকেই এলাকার চাঁদা নামে এই তোলাবাজি চলে। ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, প্রতিমাসে কাউন্সিলারের টিম ও যুব নেতাদের টিম এসে দু’বার টাকা নিয়ে যায়। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অভিযোগ শুনে দুই গোষ্ঠীরই অবশ্য দাবি, আমরা বেআইনি কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত নই। আমরা প্রতিবাদী। দোষ করছে অন্য পক্ষ। তারাই অভিযুক্ত।
দু’পক্ষেরই দাবি, তাঁরাই প্রকৃত ‘প্রতিবাদী’ হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিসের ডেপুটি কমিশনারের (নর্থ) কাছে আগেই তোলাবাজি সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তবে চড়কাণ্ডের পর তোলাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিপাকে পড়ে এখন পুলিসের ভূমিকাকে দুষছে দু’পক্ষই। অন্যদিকে, মঙ্গলবারের মারধরের ঘটনায় অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে দু’পক্ষের চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে বড়তলা থানার পুলিস।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাত থেকে এলাকার চাঁদা ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বড়তলা থানার ঢুলিপাড়া। শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তোলার ‘হিস্সা’ নিয়ে বচসা বাধে। মঙ্গলবার সকালে আসরে নামেন পুরপ্রতিনিধি সুনন্দা সরকার নিজে। যুবনেতা কেদার দাসকে প্রকাশ্যে চড় মারেন। সে ভিডিও হু হু করে ভাইরাল হয়। এরপর থানার দ্বারস্থ হয় দু’পক্ষ। মামলা ও পাল্টা মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিস। লালবাজার সূত্রে খবর, যুবনেতা কেদার দাসের অভিযোগ পত্রে কাউন্সিলারসহ ওই গোষ্ঠীর মোট সাতজনের নাম উল্লেখ রয়েছে। তার ভিত্তিতে তদন্তে নেমে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে বড়তলা থানা। ধৃতদের নাম টাবলু অধিকারী (৪৬) ও দেবাশিস দাস (৪২) ওরফে আপ্পু। অন্যদিকে কাউন্সিলার সুনন্দা সরকারের গোষ্ঠীর তরফে তন্ময় সরকার ওরফে বাবু পুলিসের কাছে যুবনেতা কেদার দাসের সাত অনুগামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে অনিল দাস ও সন্তোষ সিং (২৯) ওরফে চিকু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।বুধবার ধৃতদের আদালতে পেশ করা হলে বিচারক শর্তসাপেক্ষে জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। -নিজস্ব চিত্র