• পরিচারিকার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ, এনে মাথা মোড়ানো হল বাবা-মায়ের
    বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: হাওড়ার ডোমজুড়ে এবার উঠে এল মধ্যযুগীয় বর্বরতার ছবি। পরিচরিকার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে ‘শাস্তি’ দেওয়া হল তাঁর বাবা-মাকে। প্রকাশ্যে মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয় দম্পতির। শুধু ন্যাড়া করাই নয়, দম্পতিকে বেধড়ক মারধর করে গ্রামছাড়া করারও অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে যায়। যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি ‘বর্তমান’। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ডোমজুড় থানা। অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে ও সোমবার সকালে।


    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা ডোমজুড়ের কোলোড়া চাঁদ মসজিদ এলাকার বাসিন্দা। তাদের নাম ইশা লস্কর, আবুল হোসেন লস্কর ও সায়েম লস্কর। এই ব্যবসায়ী পরিবারে পরিচারিকার কাজ করতেন এক তরুণী। মাস খানেক আগে ওই তরুণী প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে করে চলে যায়। লস্কর পরিবারের দাবি, ওই পরিচারিকা নাকি ২০ লক্ষ টাকা চুরি করে পালিয়েছে। যদিও পরে নাকি তিনি ১৮ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন ওই পরিবারকে। সমস্যা দেখা দেয়, বাকি দু’লক্ষ টাকা নিয়ে। বারবার চাওয়া হলেও ওই টাকা আর পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে অভিযুক্তরা। অভিযোগ, এরপরেই ওই তরুণীর পরিবারকে ‘শাস্তি’ দিতে আইনকে নিজেদের হাতে তুলে নেয় ইশা, আবুল, সায়েমরা। ডেকে পাঠানো হয় পরিচারিকার বাবা-মা এবং ভাইকে। প্রথমে একটি কারখানায় আটকে রেখে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যেই পরিচারিকার বাবা-মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। রেহাই পায়নি পরিচারিকার ভাইও। তারও মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই মধ্যযুগীয় বর্বরতার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রামছাড়া হতে হয়েছে ওই পরিবারকে। ভয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন জগদীশপুরের একটি জায়গায়। এমনকী, পুলিসের দ্বারস্থ হতেও সাহস পাননি তাঁরা।


    ভিডিওতে দেখা যায়, নিজেরাই বিচারের ‘নিদান’ দিয়ে কাঁচি দিয়ে চুল কেটে দিচ্ছে পরিচারিকার বাবা ও মায়ের। ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে কাঁদছেন ওই দম্পতি। ওই ভিডিও ভাইরাল হতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। হস্তক্ষেপ করে ডোমজুড় থানা। তদন্তে নেমে তারা তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। নিগৃহীতদের দায়ের করা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে তদন্ত। এখন প্রশ্ন উঠছে, সভ্য সমাজে মধ্যযুগীয় বর্বরতা কেন? পুলিস পরিবারটিকে উদ্ধার করেছে। তাঁদের বয়ান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। পরিচারিকার মা বলেন, হঠাৎ করেই দলবল নিয়ে ওরা আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। বলে, মেয়েকে হাজির কর, না হলে যা ক্ষতি করেছে, তা ফেরত দিক। আমাদের ঘরে তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে চলে যায়। পরে আমাদের একটি কারখানায় নিয়ে গিয়ে সারারাত আটকে রাখে। পরের দিন সকালে আমাদের গ্রামছাড়া করতে তোড়জোড় শুরু হয়। চলতে থাকে মারধর। এরপর আমি ও আমার স্বামীকে ন্যাড়া করে দেয় ওরা। আগের রাতে ছেলের সঙ্গেও এমন কাজ করা হয়েছিল। আমার মেয়ে কী অন্যায় করেছে জানি না, আমাদের সঙ্গে এমন করা হল কেন?


    হাওড়া সিটি পুলিসের ডেপুটি কমিশনার (সাউথ) বিশ্বজিৎ মাহাত বলেন, বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। চলছে জিজ্ঞাসাবাদও। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)