• ছুটির ডেস্টিনেশনের তালিকায় বিশ্বের সেরা ২৫’এ কলকাতা 
    বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘এ কলকাতার মধ্যে আছে, আরেকটা কলকাতা/হেঁটে দেখতে শিখুন।’ এ শহরের মানুষরাও বলেন, কলকাতাকে হেঁটে না দেখলে শহরের গন্ধ-বর্ণ-রূপ আস্বাদন করা যায় না। উত্তর কলকাতার সরু গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, কানা গলির শেষে আটকে না গেলে, কলকাতা কি চেনা যায়? দক্ষিণের সাদার্ন অ্যাভেনিউ’র পাতা ঝরা বসন্তে পা রেখে মর্মর আওয়াজ না তুলে হাঁটতে পারলে, কলকাতা কেন কাছে টানবে? সল্টলেকের ইমারতের মাঝে দাঁড়িয়ে যদি কেউ গেয়ে ওঠে, ‘আমি খুঁজছি আমি খুঁজছি/তোমার ঠিকানা,/অলি-গলি ঘুরে ক্লান্ত/তবু তোমায় পাচ্ছি না।’ তবেই তো নরম শহর দু’বাহু বাড়িয়ে আপন করে নেবে… এই শহরের স্কাইলাইনজুড়ে উড়ছে একাধিক জয়ধ্বজা। এবার আরও একটি যোগ হল। বিদেশের নামকরা ট্র্যাভেল ম্যাগাজিনের বিশ্বের সেরা ২৫ ভ্রমণবান্ধব শহরের তালিকায় জায়গা করে নিল কলকাতা। ছুটি কাটানোর জন্য বিশ্বের সেরা ২৫টি জায়গার একটি হল এ শহর। এই খবর শুনে উচ্ছ্বসিত রাজের পর্যটনমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক স্বপ্ন রয়েছে কলকাতাকে নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। শহর কলকাতা বিশ্বের দরবারে সমাদৃত হচ্ছে। এই স্বীকৃতি শহরের মুকুটে আরও একটা পালক যোগ করল।’


    ‘ট্র্যাভেল প্লাস লেসিওর’ নামের ওই নামী ম্যাগাজিনের পৃথিবীজুড়ে থাকা প্রায় দু’লক্ষ পাঠক ভোট দিয়েছেন। ছ’টি বিষয়ের উপর হয়েছে ভোটাভুটি। ১, ল্যান্ডমার্ক। ২, সংস্কৃতি। ৩, খাবারদাবার। ৪, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ। ৫, বাজার, ৬, দ্রব্যমূল্য। ২৫ শহরের তালিকার প্রথমে রয়েছে মেক্সিকোর সান মিগুয়েল দি অ্যালেন্ডে। দ্বিতীয়, ভারতের উদয়পুর। ১৯ নম্বরে স্থান কলকাতার। দেশের আরও একটি শহর জয়পুর রয়েছে ২১ নম্বরে। কলকাতার এই স্বীকৃতিতে বেজায় খুশি শহরবাসী। অনেকে বলছেন, ‘দুর্গাপুজোকে বর্তমান সরকার যে মাত্রায় বিশ্বের কাছে বিজ্ঞাপন করেছে, সেটা কিন্তু দেখার মতো।’ 


    এই ছোট শহরটির পরতে পরতে রহস্য, গল্প, মিথ, হাসি-কান্না। কিছুক্ষণ পর পর পাল্টাতে থাকে শহরের চরিত্র। কালীঘাটের মন্দির যখন শাঁখ-ঘণ্টার আওয়াজে গমগম করে। তখন যাদবপুর এলাকায় রাজনীতির স্লোগান শোনা যায়। কলেজ স্ট্রিটে যখন বইয়ের ভিড় গুনগুন করে তখনই বড়বাজারে ব্যবসাদারদের হাঁকডাক। যুবভারতীতে যখন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের গর্জন তখন সেক্টর ফাইভে কর্পোরেট অফিসে মউ চুক্তির হর্ষোল্লাস। এ সবকিছু মিলেমিশে হাওড়া ব্রিজ, দক্ষিণেশ্বর, ভিক্টোরিয়া, মাদার টেরেজার স্মৃতির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে হাঁটে। আর সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুর্গাপুজোয়। তখন যেন শহরের অন্য সাজ। এ শহরের মাটির নীচে মেট্রো ছোটে, নব্য বাইপাসের চারদিকে মাথা তুলে দাঁড়ায় চোখ ধাঁধানো হোটেল। কলকাতা কি কলকাতা হতো, তার লোকজন যদি না থাকত? যদি না কেউ ময়দানে চিত্ হয়ে সারাটা দুপুর কাটিয়ে দিত। যদি না কেউ সিনেমা-থিয়েটারের জন্য লম্বা লাইন দিত নন্দনে। ২৫’এর তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার খবর শুনে, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী অসিত গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘ঠিকই তো। আমাদের কলকাতার মতো এরকম চমত্কার জায়গা আর কোথায় পাবে? বড়লোকও থাকতে পারে, গরিবও খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে।’ কবীর সুমন লিখেছিলেন, ‘এই শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু/ পালাতে চাই যত, / সে আসে আমার পিছু পিছু...।’
  • Link to this news (বর্তমান)