‘ভূমিরক্ষক’ থেকে জমির লুটেরা, ২৪ ঘণ্টা পরও অধরা সোনারপুরের জেসিবি জামাল
বর্তমান | ১৮ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: একসময়ে ‘জমি হাঙর’দের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই চালাত সোনারপুরের জামালউদ্দিন সর্দার ওরফে জামাল। সময়ের বিবর্তনে সেই জামালই এখন ‘কামাল’ করছে। গ্রামবাসীদের জমি কব্জা করে রীতিমতো ‘ল্যান্ড মাফিয়া’য় পরিণত হয়েছে একসময়ের ‘প্রতিবাদী’ জামাল।
মুহুরির লাইসেন্স রয়েছে সোনারপুরের এই ‘সালিশি মাতব্বর’এর। বরাবরই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রহটা বেশি। একসময়ে জমি লুটের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের সঙ্গে থাকলেও, এখন তা হাতিয়ে নেওয়াটাকেই পেশা বানিয়ে ফেলেছিল। অসহায় গরিব মানুষকে নিজের ফাঁদে ফেলতে সোনারপুর থানার বাইরেই দিনভর ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকত জামাল। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এই কাজ সে নিয়মিত করেছে। পরে আর থানা চত্বরে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি জামালকে। তখন সোনারপুর স্টেশনের (থানার একদম উল্টো দিকেই) কাছে একটু আড়ালে বসেই থানার গেটের দিকে নজর রাখত। সেখান থেকে কেউ বেরোলেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে কৌশলে জেনে নিতে সেই ব্যক্তির কী ধরনের অভিযোগ বা সমস্যা রয়েছে। জমি সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ হলেই, তাঁকে নিজের কথার জালে ফাঁসিয়ে মামলা বা জমি হাতানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিত। পুলিস সূত্রেই জানা গিয়েছে, কারও যদি মামলা করার থাকত, উপযাচক হয়ে সেটা যেমন নিজেই করে দিত, তেমনই অন্য কোনও ইস্যু থাকলে কারচুপি করে সেটা নিজের নামে করিয়ে নেওয়ার আগে দু’বার ভাবত না জামাল। এভাবেই দিনের পর দিন ‘শিকার’ করে গিয়েছে এই জমি হাঙর।
এদিকে, কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও, এই স্বঘোষিত তৃণমূলীর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। ফোন বন্ধ থাকায় পুলিস তার নাগাল পাচ্ছে না। আপাতত ধৃত দু’জন শাগরেদকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জামালের ব্যাপারে আরও তথ্য জানতে চাইছে পুলিস। মঙ্গলবার থেকেই এলাকায় বসেছে পুলিস পিকেট।
বেআইনি ভাবে জমি দখল বা সরকারি জমিতে নির্মাণ বন্ধ করতে, আইনি লড়াই থেকে শুরু করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ, সবটাই করত জামাল। একদা সেই প্রতিবাদীর বিরুদ্ধেই জমি দখলের ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠে আসায় বিস্মিত অনেকেই। কারও ১০ কাঠা জমি জোর করে কব্জা করে রাখার অভিযোগ। আবার কেউ বলছেন, কাগজপত্র হাতিয়ে ছলেবলে জমি দখল করে নিয়েছে জামাল। যেমন তাড়দহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অতীন্দ্র মণ্ডলের থেকে কয়েক বছর আগে ৬৫ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পারিবারিক জমি বিবাদ মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই বিপুল টাকা নিয়েছিল জামাল। বিবাদ মেটেনি। সেই প্রধান শিক্ষকও মারাও গিয়েছেন। টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন ওই শিক্ষকের পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে, তপন দাস নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, দু’বছর ধরে আমার এক আত্মীয়ের দশ কাঠা জমি দখল করে রেখেছে জামাল। সেটা ছাড়ার জন্য কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম। কিন্তু উল্টো ওর দলবল আমায় মারতে এসেছিল। এদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতাপনগরে জমি দখল করার কাজে জামালের সঙ্গে আরও দু’জনের নাম উঠে আসছে। স্থানীয়দের দাবি, এই অঞ্চলে তিনজনই একসঙ্গে জমি হাতানোর কাজ করত।