এই সময়: দেশের আইনজীবী সংগঠনগুলির ব্যাপারে গাইডলাইন তৈরির জন্যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার বিচার করতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর মন্তব্য ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকে তোলপাড় শুরু হয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তর ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার শুনানির সময়ে বারগুলিতে রাজনীতির প্রবেশ নিয়ে মন্তব্য করে।আদালতের বক্তব্য, বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। তা হলেই তারা বারের অন্য সমস্যার সমাধান করতে পারবে। সেই প্রসঙ্গেই বিচারপতি দত্ত উদাহরণ দেন কলকাতা হাইকোর্টের। তিনি বলেন, রাজনীতি বারের কাজের ক্ষতি করছে। তাঁর আরও ব্যাখ্যা, সেখানে বারের ভোটে সাধারণ নির্বাচনের মতো ম্যারাপ বেঁধে দলের প্রচার হয়।
সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্য বেশ কয়েকটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিস্তারিত ভাবে প্রকাশ করে। সুপ্রিম কোর্টের সাইটে গিয়ে ওই এজলাসের লাইভ সম্প্রচারও পরে দেখে নেন বহু আইনজীবী। তার পরেই ‘ভূমিপুত্রে’র মন্তব্যে নিজেদের অস্বস্তি আর অস্বীকার করতে পারছেন না কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীরা। হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সম্পাদক শঙ্করপ্রসাদ দলপতি মনে করেন, দেশের সব বারের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টকে কাঠগড়ায় না তুললেই ভালো হতো।
তিনি অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘এর আগে বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে হাইকোর্টের পিছন দিকে ম্যারাপ বেঁধে সেখানে যে রীতিমতো সাধারণ নির্বাচনের আবহ তৈরি করত, তার সবটাই এখানকার ভূমিপুত্র হিসেবে বিচারপতি দত্ত জানেন। তাই হয়তো শুনানি চলাকালীন তিনি সেটা বলে ফেলেছেন।’
যদিও বার লাইব্রেরির প্রাক্তন সভাপতি প্রমিত রায় বলেন, ‘বিচারপতি দত্তর বক্তব্য শুনেছি। কিন্তু এটা জোর দিয়ে বলতে পারি, বার লাইব্রেরি ও ইন-কর্পোরেটেড ল সোসাইটিতে তথাকথিত ব্র্যান্ডেড রাজনীতি এখনও ঢোকেনি। আবার বার অ্যাসোসিয়েশনের ভোটে এ বারও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপি থেকে এবং তৃণমূলের প্যানেল থেকে সম্পাদক জয়ী হয়েছেন। তার মানে সদস্যরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভোট দিচ্ছেন। সেটাকে কি রাজনীতির কুফল বলা যায়!’
বার অ্যাসোসোসিয়েশনের আগের সম্পাদক বিশ্বব্রত বসু মল্লিকের আবার যুক্তি, ‘রাজনীতি কোথায় নেই! কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র বিচারপতিদের বঞ্চিত করে জুনিয়রদের বিভিন্ন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি করা হচ্ছে। সব হাইকোর্ট মিলিয়ে দেশের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারপতি (বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার, বর্তমানে সিকিম হাইকোর্টে কর্মরত) সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। কলকাতার অন্তত চার জনকে এড়িয়ে জুনিয়রদের সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি পদে নিয়োগ করা হয়েছে। সেটা কী? আবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি পদ দিনের পদ দিন পূরণ হয় না, এটাও কি রাজনীতি নয়?’