এই সময়: এ যেন ভেলকি! এই ছিল, এই নেই। তাঁরা বাজারে ঢোকা মাত্রই আনাজের বাজার স্বাভাবিক। দর ঠিক যেমনটি হওয়ার কথা, তেমনই। দু’-এক জন কেউ একটু এদিক-ওদিক করলেও টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের ধমক খেয়ে দাম কমিয়ে ফেলছেন। কিন্তু সেই দাম থাকছে কী? ক্রেতাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা বাজার ছাড়তেই আবার মগডালে চড়ছে আনাজের দাম।তা হলে লাভটা কী হচ্ছে? অভিযোগ, এই দাম বাড়ানোর খেলার পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে খুচরো বিক্রেতাদের দ্বারা। সে জন্যেই দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের একাংশও। তাঁরা মনে করছেন, কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। টাস্ক ফোর্স যে রিপোর্ট নবান্নে জমা দেবে, তাতে এই বিষয়ের উল্লেখ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
গত দেড়-দু’সপ্তাহ ধরেই আনাজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আনাজপত্র কার্যত সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে গত ৯ জুলাই বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নির্দেশ দেন, ১০ দিনের মধ্যে দাম কামাতে হবে। সেই হিসেবে কাল, শুক্রবারই শেষ হচ্ছে ১০ দিনের সময়সীমা। ৯ তারিখ বৈঠকের পরের দিন থেকেই বাজারে নামে মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করে দেওয়া টাস্ক ফোর্স।
প্রথম দিন বাজারে যেতেই ধরা পড়ে যে পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরো বাজারের দামে বিপুল ফারাক। খুচরো বাজারে আনাজ যে দামে বিক্রি হওয়া উচিত, দাম তার থেকে অনেকটাই বেশি। দ্বিতীয় দিন মানিকতলা বাজারে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে বচসাও বাধে টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের। শেষ পর্যন্ত দাম কমাতে বাধ্য হন বিক্রেতারা। কিন্তু টাস্ক ফোর্স ফিরে যেতেই আবার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
তার পর থেকে কার্যত এটাই রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাস্ক ফোর্স কবে কোন বাজারে যাবে, তা আগে থেকে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জেনে যাচ্ছিলেন বিক্রেতারা। ফলে সে দিন আনাজের দাম কমে যাচ্ছে। যে সময়টা টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা বাজারে থাকছিলেন, সেই সময়ে মোটের উপরে ন্যায্য দামেই বিক্রি হচ্ছে আনাজ। কিন্তু টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা ফিরে যেতেই ফের বেড়ে যাচ্ছে দাম।
নজরদারির পরেও কী করে ঘটছে এমনটা? খুচরো বিক্রেতাদের একাংশ বলছেন, পাইকারি বাজারের থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করাই এক রকম অলিখিত নিয়ম। কেউ কেউ কম দামে আনাজ বেচতে চাইলেও অনেকে তা করতে দিচ্ছেন না। হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
অন্য দিকে, টাস্ক ফোর্সের হাতে সেই অর্থে পদক্ষেপ করার মতো ক্ষমতা না থাকায় বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাচ্ছে না। সে কথা মানছেন টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলেও। তিনি বলেন, ‘এই যে আমরা চলে এলে দাম বেড়ে যাচ্ছে, এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কিন্তু সেটা স্থানীয় থানার পুলিশের সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে যে রিপোর্ট দিচ্ছি, তাতে এর উল্লেখ থাকবে। তার পরে প্রশাসন যেমন ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’