• এএসআইয়ের সংরক্ষিত মন্দির চত্বরে ‘দাদাগিরি’ চেয়ারম্যানের
    এই সময় | ১৮ জুলাই ২০২৪
  • সূর্যকান্ত কুমার, কালনা

    অতীতে দলেরই কাউন্সিলাররা তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। বিতর্কে জড়িয়েছেন একাধিকবার। এবার এএমএএসআর (অ্যানসিয়েন্ট মনুমেন্টস অ্যান্ড আর্কিয়োলজিক্যাল সাইটস অ্যান্ড রিমেইন্স রুলস ১৯৫৯) রুল ভেঙে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের (এএসআই) সংরক্ষিত এলাকায় দলবল নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল কালনার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্তর বিরুদ্ধে।কালনার টেরাকোটা মন্দির চত্বরে ই-রিকশা ঢোকানো, নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর ও প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার একটি ভিডিয়ো (এর সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুরের এই ঘটনার পরে মন্দিরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এএসআইয়ের কালনা সাব সার্কলের সিনিয়র কনজ়ার্ভেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট অমিত মালো।

    বুধবার গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপের জন্য তিনি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন এএসআইয়ের কলকাতা সার্কলের সুপারিন্টেন্ডিং আর্কিয়োলজিওস্টের কাছে। ওই রিপোর্টে তিনি রাজবাড়ি চত্বরে দ্রুত সিসিটিভি ও ৪ জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের আর্জি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরেননি চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত। বাড়িতে গিয়েও দেখা মেলেনি তাঁর।

    যোগাযোগ করা হয় জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি কী হয়েছে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। খারাপ আচরণ তো কারও সঙ্গে করা যায় না। যদি করে থাকেন নিঃসন্দেহে খারাপ করেছেন।’ বর্ধমান রাজাদের উদ্যোগে কালনায় তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকটি টেরাকোটা মন্দির। তার একটি মন্দির দেশের সেরা ৭টি মন্দিরের একটি হিসেবে স্বীকৃত। এএসআইয়ের অধীনে থাকা সেই মন্দির চত্বরে ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়, যা পুরাতাত্ত্বিক আইনে নিষিদ্ধ।

    সেখানেই উল্টোরথে রথ কমিটি ২৫ চূড়ার লালজি মন্দিরে ভোগের ব্যবস্থা করে। চেয়ারম্যানও রয়েছেন ওই কমিটিতে। অভিযোগ, ভোগ খেতে আসা মানুষদের জন্য ই-রিকশায় জলভর্তি জার ঢোকাতে গিয়েছিলেন চেয়ারমান। তার থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। বাধা দিতে গেলে মন্দিরের নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর, গালিগালাজ এমনকী প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয় বলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ।

    এ প্রসঙ্গে এএসআইয়ের সিনিয়র কনজ়ার্ভেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট অমিত মালো বলেন, ‘এএমএএসআর রুলের ৮সি ও ৮জি২ ক্লজ অনুযায়ী মনুমেন্টের মেন্টেন্যান্সের কাজে যুক্ত গাড়ি একমাত্র ভিতরে ঢুকতে পারে। সংরক্ষিত এলাকায় রান্না করা যায় না। অনুমোদিত নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া খাওয়াও যায় না।’

    জল নিয়ে যেতে নিষেধ করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বলা হয়েছিল, নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ম্যানুয়ালি জল নিয়ে যেতে। বলা হয়েছিল, প্রয়োজনে আমাদের কর্মীরাও দিয়ে আসবে। কিন্তু চেয়ারম্যান ও তাঁর সঙ্গীরা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে গায়ের জোরে ই-রিকশা ঢুকিয়ে নেন। নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিতে গেলে মারধর করা হয়। চিৎকার করে আমাকে ও কর্মীদের বলেন, বাইরে বেরলে খুন করে ফেলবেন। বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়াবেন যাতে আমি সাসপেন্ড হয়ে চাকরি হারাই।’

    পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের এই আধিকারিকের আরও অভিযোগ, ‘কর্মীরা ভিডিয়ো করলে তা মুছতে বাধ্য করা হয়। ভেঙেও দেওয়া হয় একটি মোবাইল।’ জানান, মন্দিরের ভিতরে গ্যাস সিলিন্ডার, ওভেন নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ১২০০ থেকে ১৩০০ মানুষের ভোগ রান্না করা হয়। এত মানুষের রান্না হলে ডিজি এএসআইয়ের অনুমতি নিতে হয়।

    তাঁর কথায়, ‘মন্দিরে যে সব রিচুয়াল চলে আসছে সেগুলো অ্যালাউ থাকে। তবে রাজ পরিবারের অথোরাইজেশন লেটার থাকতে হবে যেখানে সেবায়েতের নাম উল্লেখ থাকবে। এবার সেই লেটার চেক করব।’ আতঙ্কিত ওই নিরাপত্তারক্ষী এদিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বলেন, ‘আমার কিছু বলার নেই। যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’

    ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মনোরঞ্জন সাহা বলেন, ‘অভিযোগ সত্যি। এএসআইয়ের কর্মী-অফিসাররা নিজেরাও টোটো নিয়ে ভিতরে ঢোকেন না। এমন ঐতিহাসিক নির্দশনে শৃঙ্খলা মানা সবারই উচিত। এগুলো তো আমাদের গর্ব। নিরাপত্তারক্ষী তাঁর দায়িত্বই পালন করেছিলেন।’
  • Link to this news (এই সময়)