এই সময়, কৃষ্ণনগর: সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে লেখা ছিল, বিখ্যাত গয়নার শোরুমে ভ্যাকান্সি রয়েছে। পোস্টে দেওয়া ফোন নম্বরে কাজ পাওয়ার আশায় যোগাযোগ করেছিলেন কৃষ্ণনগরের কলেজছাত্রী। তাদের দাবি মতো, বেশ কিছু টাকা পাঠান দুঃস্থ পরিবারের তরুণী। এর পরে তাঁকে রানাঘাটের একটি গয়নার শোরুমে গিয়ে কাজে যোগ দিতে বলা হয়। মঙ্গলবার সকালে সেখানে পৌঁছে বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করার পরে ছাত্রীটি জানতে পারেন, সেখানে কোনও নিয়োগ চলছে না।তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়াতেও কোনও বিজ্ঞাপন দেননি। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে কেঁদে ফেলেন ছাত্রী। শোরুম কতৃর্পক্ষের পরামর্শ মেনে কৃষ্ণনগরের সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানান তিনি। দুঃস্থ পরিবারের ছাত্রীটি নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে কাজ খুঁজছেন জেনে এর পরে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করে দেন শোরুমের মালিকই। এমনই মানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকল রানাঘাট।
তরুণী বলেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ার ওই পোস্টে বলা ছিল, মাধ্যমিক পাশ থেকে গ্রাজুয়েট, ডোনেশন-মানি-ট্রেনিং ছাড়া জব দেওয়া হচ্ছে। বেতন ১৫,৫০০ থেকে ৩৫,৫০০। কলেজে পড়ার খরচ চালাতে সুবিধে হবে ভেবে যোগাযোগ করি।' এর পরে ৪ জুলাই তাঁকে বলা হয়, কাজে যোগ দিতে হলে দুই সেট শাড়ি এবং আরও কিছু জিনিস কেনার জন্য ৩,২৫০ টাকা জমা দিতে হবে। নিজের না থাকায় অন্য একজনের ইউপিআই আইডি থেকে পেমেন্ট করেন তিনি।
সে দিন বিকেলেই আবার ইনসিওরেন্সের জন্য ৭,২০০ টাকা জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু এত টাকা দিতে পারবেন না বলায় শেষপর্যন্ত ৫,২০০ টাকায় রফা হয়। কিন্তু এর পরেও নানা কথা বলে টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ। ছাত্রী বলেন, 'ওদের দাবি মতো সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে দিই। মঙ্গলবার কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তার আগে ১০,০০০ টাকা চাওয়া হয়। না হলে নাকি চাকরি হবে না। সেটাও কোনও রকমে জোগাড় করে পাঠাই। সব মিলিয়ে ২৩,১০০ টাকা। কিন্তু রানাঘাটের ওই শোরুমে গিয়ে শুনি কোনও নিয়োগের ব্যাপার নেই। যে নম্বরগুলি থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল, সেগুলি ততক্ষণে সুইচড অফ।'
এক ঘণ্টা বাইরে অপেক্ষা করার পর সিকিউরিটিকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি। তখনই জানতে পারেন কোনও নিয়োগই হচ্ছে না সেখানে। শোরুম কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে কৃষ্ণনগরে সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানান তিনি। শোরুমের বাইরে ছাত্রীটিকে কাঁদতে দেখে বেরিয়ে আসেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ওনার তন্ময় ধর।
তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে আমাদের রানাঘাট বা কৃষ্ণনগরের শোরুমে কর্মীর দরকার নেই। কিন্তু ওর কান্নাকাটি আমাদের নাড়া দিয়েছে। তাই আমরা ওকে একটা কাজ দেব। অগস্ট থেকে আমাদের কৃষ্ণনগরের শোরুমে ওকে কাজে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
এ ভাবে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নাম করে প্রতারণার এই কারবারে চিন্তিত তন্ময় বলেন, 'এতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানও জড়িয়ে আছে। আমাদের শোরুমে যখন কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন হয়, তখন কোনও কর্মপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেওয়ার ব্যাপার একেবারেই থাকে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সব ভুয়ো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে যাতে আর কেউ প্রতারিত না হন, সে জন্য মেয়েটিকে সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলেছি। আমার মনে হচ্ছে, এর পিছনে বড় চক্র আছে।'