৬০-৯০ লক্ষ দিলেই NEET-PGতে ভালো র্যাঙ্ক! বর্ধমানের চিকিৎসককে ‘প্রলোভন’ জালিয়াতদের
প্রতিদিন | ১৮ জুলাই ২০২৪
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পরীক্ষায় অজানা প্রশ্ন এলে ছেড়ে দিতে হবে। নেগেটিভ মার্কিং হবে ? এমন ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। অথচ পরীক্ষার ফলাফলে নম্বর ঠিক বেড়ে যাবে। আর এতটাই ভালো র্যাঙ্ক হবে যে পছন্দমতো সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ মিলবে। বর্ধমানের এক চিকিৎসককে NEET-PG নিয়ে এমনই প্রলোভন দেখিয়ে ফোন করল জালিয়াতরা! তাঁকে এত সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে ৬০ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে দাবি ওই জালিয়াত সংস্থার। এনিয়ে বর্ধমান পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই চিকিৎসক। সেইসঙ্গে জালিয়াতদের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথোপকথনও পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে প্রমাণ হিসেবে। এই ঘটনার পর এক চিকিৎসক সংগঠনের তরফে তদন্তের আর্জি জানিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বর্ধমানের (Burdwan) চিকিৎসক তানভি আজমি। তিনি মেমারি পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক। উচ্চশিক্ষার জন্য NEET-PG তে বসতে চান। সেই মর্মে আবেদন জানিয়েছিলেন। আগামী আগস্টে সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তানভি। এই সম্পর্কে বুধবার তাঁর কাছে ফোন আসে। বলা হয়, ৬০-৯০ লক্ষ টাকা দিলে ওএমআর (OMR) শিটে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে প্রথমদিকের র্যাঙ্ক করে দেবে ওই সংস্থা। কীভাবে তা করা হবে? তা জানতে চাইলে চিকিৎসককে বিস্তারিত জানানো হয়। জালিয়াত সংস্থার তরফে এক ব্যক্তি জানান, পরীক্ষায় ২০০ টি প্রশ্নের মধ্যে ওএমআর শিটে ১০০টি প্রশ্ন ছেড়ে দিতে হবে। বাকি ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে যেগুলোর উত্তর নিয়ে সংশয় থাকবে, সেগুলোও ফাঁকা রাখতে হবে। পরে উত্তরপত্র (Answer sheet)হাতে নিয়ে বাকি সব ওই সংস্থা করে দেবে। তাতে ফলপ্রকাশের পর তাঁর র্যাঙ্ক উপরের দিকে থাকবে। তাতে পছন্দমতো সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ মিলবে।
এসব শুনে যদিও চিকিৎসক (Doctor) তানভি আজমি প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি সাফ জানিয়েছেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। মা-বাবার অসুস্থ। তাঁদের দায়িত্ব নিতে হয়। ফলে NEET-PGতে ভালো র্যাঙ্কের জন্য এই মুহূর্তে এত টাকা তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তখন আবার তাঁকে সমঝোতার (Negotiation) কথাও বলা হয়। ওই ব্যক্তি জানতে চান, কত টাকা দিতে পারবেন। যদি কিছু কম দেন, তাহলেও হবে। এই প্রস্তাবও অবশ্য খারিজ করেছেন তানভি। স্পষ্ট জানান, তিনি কোনও অর্থই দিতে পারবেন না। এই ফোন পাওয়ার পরই অবশ্য মেমারির (Memari) স্বাস্থ্য আধিকারিক তানভি আজমি মেমারি থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
অ্যাসোসিয়েশন ফর হেলথ সার্ভিস নামে চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের পক্ষে এই বিষয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে (DG) চিঠি দিয়ে তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে। এনিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, আমাদের রাজ্যের মধ্যে থেকে ফোন কল করা হয়নি। তবে পুরোটাই তদন্তের মধ্যে রয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়েই খতিয়ে দেখছি।”