নব্যেন্দু হাজরা: সুইগি, জোম্যাটো, বিগ বাস্কেট বা ব্লিংকিট–বাড়ি বাড়ি খাবার এবং পণ্য সরবরাহকারী কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে উদ্যোগী রাজ্য। নূন্যতম মজুরি থেকে দুর্ঘটনায় বিমা-সহ অন্যান্য কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে এদের জন্য একটি ওয়েলফেয়ার বোর্ড তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নবান্নে এ বিষয়ে একটি বৈঠক করেন রাজ্যের অর্থ, শ্রম এবং পরিবহণ দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। ডাকা হয়েছিল, এই অ্যাপ নির্ভর বেসরকারি খাবার সরবরাহকারী সংস্থার প্রতিনিধিদেরও। সেখানে ঠিক হয়েছে, এই কর্মীদের একটি ডেটাবেস তৈরি করবে রাজ্য সরকার। সংস্থার মাধ্যমে দেওয়া হবে ই-কার্ডও। ঝড়-জল উপেক্ষা করে বাইকে চড়ে যে ছেলেমেয়েরা বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছয়, তাঁদের স্বীকৃতি দিতেই এই পরিকল্পনা।
অ্যাপ-নির্ভর খাবার এবং পণ্য সরবরাহ সংস্থার কর্মীদের বলা হয় গিগ ওয়ার্কার্স। এই ধরনের কর্মীর সংখ্যা ঠিক কত, তার সঠিক তথ্য রাজ্যের কাছে নেই। তাই প্রথম ধাপে একটি ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবে নবান্ন। তার পর কোন সংস্থায় কত কর্মী কাজ করেন, তাঁরা সঠিক মজুরি পান কি না তাঁদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখা হবে। এবং তার জন্যই তৈরি করা হবে ওয়েলফেয়ার বোর্ড। পাশাপাশি এই কর্মীদের একটা স্বীকৃতিও দেওয়া হবে। তা পরিবহণ দপ্তর দেবে। নবান্নের এক কর্তা জানান, বেসরকারি এই খাবার সরবরাহকারী সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে, গিগ কর্মীদের জন্য ই-কার্ড তৈরি করবে পরিবহণ দপ্তর। কার্ডপিছু সামান্য একটি ফি জমা দিয়ে তা নিতে হবে ওই সংস্থাকে। দীর্ঘদিন ধরেই এই বেসরকারি অ্যাপ সংস্থাগুলো এখানে ব্যবসা করলেও তাঁদের থেকে সেভাবে কোনও ট্যাক্স পায় না সরকার। প্রাইভেট নাম্বার প্লেটের বাইকেই চলে জিনিসপত্র সরবরাহের কাজ। বাণিজ্যিক নম্বর প্লেটের সিদ্ধান্তের কথা পরিবহণ দপ্তর বললেও বিষয়টি খুব একটা এগোয়নি। তাই এবার সংস্থাগুলোকেই ই কার্ড সংগ্রহের কথা জানানো হয়েছে।
নবান্নের এক কর্তা জানান, এই গিগ কর্মীদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমার বিষয়গুলো দেখার জন্য তৈরি ওয়েলফেয়ার বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধিরা যেমন থাকবেন, তেমনই থাকবেন অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী সংস্থার প্রতিনিধিরাও। এই বোর্ডই ঠিক করবে, কোন কোন সুযোগ-সুবিধার আওতায় এই কর্মীদের আনা যায়। করোনাকাল থেকেই বাড়ি বাড়ি খাবার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়ার বিভিন্ন অ্যাপ সংস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই অ্যাপের দৌলতেই রেস্তরাঁয় না গিয়েও যেমন ঘরে বসে সেখানকার খাবার খাওয়া যায়। তেমনই বাজারে না গিয়ে ঘরে বসেই পাওয়া যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। এই পরিষেবার দৌলতেই বিভিন্ন বেসরকারি অ্যাপ সংস্থায় কাজ করেন হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা। কেউ ফুলটাইম কেউ বা অন্য কাজ করেও কয়েক ঘণ্টার জন্য। কিন্তু এই কর্মীদের দাবি, অন্যান্য অনেক রাজ্যে গিগ ওয়ার্কার্সরা নানা সুযোগ-সুবিধা পেলেও এখানে তাঁরা পান না। এই সংস্থাগুলি পার্টনার বা অন্য নামের আড়ালে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। এই কর্মীদের নির্ধারিত সময় ধরে ধরে কাজের ‘স্লট’ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এক-একটি স্লটে খাওয়া ও বিশ্রামের সময় রাখা হয়েছে মাত্র ১৫ মিনিট। তাছাড়াও বঞ্চনার একাধিক অভিযোগ রয়েছে শহরে মোটরবাইকে সরবরাহের কাজের সঙ্গে যুক্তদের। এবার তাঁদের কিছু সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার।