সোনারপুরের জামাল সর্দার এখন সংবাদমাধ্যমে চর্চিত নাম হয়ে উঠেছে। মহিলাকে শিকলে বেঁধে অত্যাচার থেকে শুরু করে গৃহবধূর স্বামীকে শিকলে বেঁধে উল্টো করে মারধর করার ঘটনায় অভিযুক্ত জামালউদ্দিন সর্দার। এবার তার বাড়িতে হাজির হল বন দফতর। কারণ জামাল সর্দারের বাড়ির সুইমিংপুলে কচ্ছপ রয়েছে বলে অভিযোগ। গোপন সূত্রে খবর পেয়েই বুধবার বেশি রাতে জামাল সর্দারের বাড়ির সুইমিং পুলে থাকা কচ্ছপ উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বন দফতরের অফিসাররা। ডিএফও মিলন মণ্ডলের নির্দেশে বারুইপুর রেঞ্জ অফিস থেকে ৬ সদস্যের একটি দল প্রথমে সোনারপুর থানায় আসে। তারপর তাঁরা যান জামাল সর্দারের বাড়িতে। কিন্তু জামাল ফেরার এবং বাড়িতে তালাবন্ধ। তাই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বন দফতরের কর্তাদের। অধরা কচ্ছপ।
এভাবে বাড়িতে বিনা অনুমতিতে বন্যপ্রাণী রাখা আইনত অপরাধ। তাই বাড়িতে কচ্ছপ রাখার বিষয়ে বনদফতর আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ডিএফও মিলন মণ্ডল। তাই এই পদক্ষেপ করা হয়। যদিও তা বিফলে গিয়েছে। জামাল সর্দারের বিরুদ্ধে ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন ধারায় মামলা দায়ের করা হবে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। জামাল সর্দারের বাড়ির সুইমিং পুলে থাকা কচ্ছপটির বিজ্ঞানসম্মত নাম ইন্ডিয়ান সফট শিল্ড টার্টেল। বেআইনিভাবে এটা রাখা হয়েছে। তার জন্য তিন থেকে সর্বোচ্চ সাত বছরের পর্যন্ত জেল এবং ২৫ লক্ষ টাকার জরিমানা হতে পারে বলে জানিয়েছে বন দফতর।
জামাল সর্দারের নাম তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেও তা খারিজ করে দেন বিধায়ক লাভলি মৈত্র। তবে এই জামাল সর্দার ২০১৬ সালে প্রায় এক বিঘারও বেশি জমি কেনে। আর তার উপর প্রাসাদোপম বাড়ি নির্মাণ করে। এই দেখে এলাকাবাসীর অনেকেই তাকে মান্যিগন্যি করতেন। কিন্তু আসলে জামাল যে একজন পুরোদস্তুর ফেরেব্বাজ তা তাঁরা কেউ বুঝতে পারেননি। এখানের কথা যাতে বাইরে চাউর না হয় তার জন্য ৫০টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টল করা ছিল সারা বাড়িতে। আধুনিক সমস্ত সুযোগ সুবিধার সঙ্গে বিলাসবহুল জীবনযাপন করত এই জামাল। একটি ঘোড়া কিনেছিল জামাল। জামালের এই বাড়ি বৈধ কি না সেটা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান প্রতাপনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবনাথ দত্ত।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জামাল বিপদে পড়া মানুষজনের থেকে সুযোগ নিত। কারও জমির সমস্যা থাকলে ঠিক করিয়ে দেবে বলে টাকা নিত। আবার কারও পারিবারিক সমস্যা থাকলে মিটিয়ে দেবে বলে টাকা নিত। এমন নানা কাজ আছে যা সহজে হয় না তা করিয়ে দেবে বলে মোটা টাকা পকেট পুড়ত জামাল বলে অভিযোগ। সোনারপুরের বাসিন্দা জামাল সর্দারের বিরুদ্ধে মহিলাকে শিকলে বেঁধে অত্যাচার এবং আর এক বধূর স্বামীকে শিকলে বেঁধে উল্টো করে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সামনে আসতেই গোটা এলাকা তেতে ওঠে। বেরিয়ে পড়ে জামাল সর্দারের আসল চরিত্র। যদিও অভিযুক্ত জামাল সর্দার এখন পলাতক। তার সন্ধানে নানা জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।