কমলাক্ষ ভট্টাচার্য: জামালের রাজপ্রাসাদ। কিন্তু পরিবারের অন্যান্যদের দৈন্য দশা। বার্ধক্য ভাতার টাকায় সংসার চালান জামালের অশীতিপর মা শাহাজাদি সর্দার। একমাত্র অসুখবিসুখ হলে, তবেই মাকে দেখত জামাল। একরাশ অসহায়তা এখন মায়ের চোখেমুখে। জামালের প্রাসাদের গায়েই তার দাদা মুজিবুর সর্দারের বাস। তাঁরও ত্রিপল ঢাকা সংসার। জনমজুরি করে দিন গুজরান করেন। ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বহুদিন। দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনও যোগাযোগও নেই।
সোনারপুরে একদম রাস্তার উপরেই প্রকান্ড বাড়ি জামালউদ্দিন সর্দারের। বাড়িতে প্রবেশের পথেই রয়েছে তোরণ স্টাইলে মূল ফটক। বিরাট গেট খুলে ভিতরে প্রবেশ করার পরই মাঝখান দিয়ে ঝাঁ চকচকে সরু রাস্তা। তার দুপাশে বাহারি গাছ। লন পেরিয়ে বাড়ির মূল ভবন। তিনতলা বাড়িটি হলুদ-নীল রঙের। চারদিক কাচে মোড়া। বাড়ির পুরো এলাকা ঘিরে রয়েছে উঁচু পাঁচিল। বাড়িতে নজরদারির জন্য রয়েছে মোট ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। বাড়ির মধ্যে রয়েছে সুইমিং পুল। এমনকি রয়েছে একটি ঘোড়াও। সেই ঘোড়ার দেখাশোনা করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে একজন লোককেও রেখেছেন জামাল।
জামালউদ্দিনের প্রাসাদের ভিতর সুইমিং পুলে রয়েছে 'বিরল' প্রজাতির দুটো কচ্ছপও। সেই কচ্ছপ উদ্ধারের জন্য কাল আড়াই ঘণ্টার পর আজ দেড় ঘণ্টা চেষ্টা করে বন দফতর। কিন্তু সিসিটিভি মোড়া প্রাসাদের মেন গেটে তালা। পাওয়া যায়নি গেটের সেই তালার চাবি। এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে ভেতরে ঢোকার মরিয়া চেষ্টা চলে। কিন্তু আবেদনে সাড়া দেয়নি এলাকাবাসী। তাই গেট খুলে আর ভিতরে ঢুকতে পারেননি বন দফতরের কর্মীরা। ফলে আজও কচ্ছপ উদ্ধার হয়নি। রণে ভঙ্গ দিয়ে ফিরে যান বন দফতরের কর্মীরা। প্রসঙ্গত, বুধবার রাতেই জামাল সর্দারের বাড়ির সুইমিং পুলে থাকা কচ্ছপ উদ্ধারে তৎপর হয় বনদফতর।
ডিএফও মিলন মন্ডলের নির্দেশে বারুইপুর রেঞ্জ অফিস থেকে একটি ৬ সদস্যের দল প্রথমে সোনারপুর থানায় যায়। তারপর পৌঁছয় জামাল সর্দারের বাড়ি। তাঁদের হাতে ছিল জাল ও কচ্ছপ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য সামগ্রী। কিন্তু রাতে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ফিরে যান তাঁরা। স্থানীয়রা বলছেন, তোলাবাজি, সালিশি, জমি-জিরেত হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মহিলাদের ওপর অত্যাচার, ধর্ষণের হুমকি- 'জামাল রাজে' এসব ছিল রোজকার ব্যাপার। থানায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। ২০২১-এ স্থানীয় বিজেপি কর্মী হারান অধিকারী খুনে মূল অভিযুক্ত এই জামালউদ্দিন সর্দার আর তার দলবল।