রেললাইন থেকে পুরুলিয়ার বিজেপি নেতার দেহ উদ্ধার, ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু?
প্রতিদিন | ১৯ জুলাই ২০২৪
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে রহস্যজনক মৃত্যু হল পুরুলিয়ার বিজেপি নেতার। বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের খড়গপুর ডিভিশনের খড়গপুর-হাওড়া রেল শাখার বালিচক ও হাউর স্টেশনের মাঝখানে ওই নেতার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। খড়গপুর জিআরপি জানিয়েছে, মৃতের নাম সত্যজিৎ অধিকারী (৪৮)। তাঁর বাড়ি পুরুলিয়া শহরের রথতলায়।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি পুরুলিয়া (Purulia) শহরের দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি ছিলেন। পুরুলিয়ার বিজেপি (BJP) সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর ঘনিষ্ট সত্যজিৎ, লড়াকু নেতা বলে পরিচিত ছিলেন।
পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার কলকাতার সায়েন্স সিটিতে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য কমিটির বর্ধিত কর্মসমিতির সভাতে হাজির ছিলেন তিনি। সেই বৈঠক সেরে কর্মী-সর্মথকদের সঙ্গে রাত বারোটা পাঁচের হাওড়া- চক্রধরপুর ট্রেনে পুরুলিয়া ফিরছিলেন। বাড়ি ফেরার সময় এই ঘটনা।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ হয়নি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এদিন সকালে মৃতদেহ উদ্ধারের পর খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর দাদা দেবজিৎ অধিকারী মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে তাঁর দেহ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এদিন খড়গপুরে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত হয়। পুরুলিয়া জেলা বিজেপি ও তাঁর পরিবার ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে ময়নাতদন্তের দাবি তোলেন। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো বলেন, “এই ঘটনায় আমরা রেলের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত চেয়েছি। সেই জন্যই ময়নাতদন্তে ভিডিওগ্রাফি প্রয়োজন।” কিন্তু এদিন ময়নাতদন্ত হয়নি। শুক্রবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হবে।
এই নেতার মৃত্যু ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ওই বিজেপি নেতা কি কোনভাবে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যান? নাকি তাকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়? নাকি অন্য কোন কারণ রয়েছে? সব নিয়েই রয়েছে ধোঁয়াশা। খড়গপুর জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের মাথায় ও পেটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দুটি পা ভেঙে গিয়েছে।
পুরুলিয়া জেলা বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নন এসি সংরক্ষিত কামরায় সত্যজিতের আসন ছিল। ওই ট্রেন বাঁকুড়া আসার পর দলীয় কর্মীরা দেখেন যে আসনে সত্যজিৎ ঘুমিয়েছিলেন তা ফাঁকা। দলীয় কর্মীরা ভাবেন, তিনি বাথরুমে গিয়েছেন।
সাতসকালে ওই ট্রেন রেল শহর আদ্রায় আসার পরেও সত্যজিৎকে না পাওয়াই উদ্বেগ বাড়তে থাকে। খোঁজ করা হয় বাথরুমে। এছাড়া আরও একাধিক নেতা-কর্মী বিভিন্ন কামরায় ছিলেন, সেখানেও ফোন করে খোঁজ চলে। ট্রেন পুরুলিয়া স্টেশনে চলে এলেও তাঁর কোনও খোঁজ না পেয়ে দলীয় কর্মীরা বিষয়টি বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গাকে জানান।
বিবেকবাবুর কথায়, “এই ঘটনা জানার পর আমি ধারাবাহিকভাবে ওঁর মোবাইলে ফোন করে যাচ্ছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ ফোন সুইচ অফ থাকার পর, ফোন রিসিভ করে খড়গপুর জিআরপি। আমাকে জানানো হয় আপনি যাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছেন তিনি সম্ভবত মারা গিয়েছেন। তাঁর মৃতদেহের পাশ থেকেই এই ফোন উদ্ধার হয়েছে। ওই কথা শুনে হতবাক হয়ে যাই।” ওই বিজেপি নেতার পরিবারের দাবি, এই ঘটনার দ্রুত কিনারা করতে হবে। রহস্যজনক ভাবে এই মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পুরুলিয়ার বিজেপি নেতৃত্ব।