দলের অন্দরের কথা বাইরে নয়, এবার শুভেন্দু ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্জুনকে সতর্ক করলেন সুকান্ত!
প্রতিদিন | ১৯ জুলাই ২০২৪
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বঙ্গ বিজেপিতে কোন্দল চরমে উঠল। লোকসভা থেকে সদ্য চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ব্যর্থ দল। তারপরই দলের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন ও ক্ষোভ বিক্ষোভ চরমে উঠেছে। প্রকাশ্যেই দুর্বল সংগঠন ও শীর্ষ নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে মুখ খুলছেন বিজেপির একাধিক নেতারা। প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং থেকে সাংসদ সৌমিত্র ধাঁ প্রকাশ্যে রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সাংগঠনিকস্তরে বদলের দাবিও তুলেছেন তারা। এবার শুভেন্দু ‘ঘনিষ্ঠ’ বারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংকে সতর্ক করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
বুধবার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক ছিল। সেখানে প্রকাশ্যেই দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে নিশানা করে অর্জুন সিং বলেছিলেন, ‘‘বাংলায় ভোট করাতে হয়। ভোট করাতে গেলে শক্তিশালী সংগঠন দরকার। ঘরে বসে আলোচনা করলে হবে না। মাঠে-ময়দানে তা বাস্তবায়িত করতে হবে।’’ নিচুতলায় সংগঠন ‘জিরো’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন প্রাক্তন সাংসদ। রাজ্য বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতাদের দিকেই যে অর্জুনের নিশানা ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অর্জুনের এই মন্তব্য নিয়ে সুকান্ত মজুমদার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এসব কথা দলের ভিতরে বলা উচিত। সংবাদমাধ্যমের সামনে বলা উচিত নয়। কোথাও সংগঠন জিরো হলে সেখানে উঁচু থেকে নিচুতলার সকলকেই দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব আমাদের সকলের। কারও কিছু বলার থাকলে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি নাড্ডাজিকে বলুন, সাধারণ সম্পাদক সংগঠন সন্তোষজিকে বলুন। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্যরা আছেন, তাদের বলুন।’’ বিজেপি নেতা-কর্মীদের ডেডিকেশনের অভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন অর্জুন সিং। পাল্টা সুকান্তর কথায়, ‘‘আমার সকল কার্যকর্তা ও কর্মীদের সকলেরই দলের প্রতি ডেডিকেশন রয়েছে। সকলেই লড়াই-পরিশ্রম করছেন।’’
অর্জুনকে এদিন সুকান্তর সতর্ক করা নিয়ে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রসিকতার সুরে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘মনে হয় সুকান্ত অর্জুনকে দূর থেকে সতর্ক করছেন। আগামী দু-তিন মাস বিজেপির রাজ্য সভাপতি বারাকপুরে পা রাখবেন না। অন্য কোথাও যেতে হলেও বারাকপুর এড়িয়ে ঘুরপথে যাবেন।’’ এদিকে, অর্জুন প্রসঙ্গে সুকান্ত এদিন সতর্ক করলেও পরোক্ষে দলের বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকেও তিনি সতর্ক করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বারাকপুরে টিকিটের জন্য তৃণমূল ছেড়ে ফের বিজেপিতে আসেন অর্জুন। বারাকপুরে পরাজিত হন তিনি। এবার অর্জুনকে নিতে চায়নি বিজেপির বড় অংশই। সুকান্তও তাঁকে নেওয়ার বিরোধী ছিলেন। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপেই অর্জুনকে ফের বিজেপিতে ঢোকার ছাড়পত্র দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিন এলাকার দুর্বল সংগঠনের কথা পাল্টা বলে বারাকপুরে হার নিয়ে পালটা অর্জুনকেই এদিন সুকান্ত প্রশ্নের মুখে ফেলতে চেয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে, কোন্দল এড়াতে বুধবার রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে স্রোতার আসনে থাকা রাজ্য কমিটির কোনও সদস্যকেই বলতে দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে দলের মধ্যে। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিদের বৈঠকে ডাকা হলেও, বর্তমান রাজ্য সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রাক্তন রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসুকে বৈঠকে ডাকা হয়নি। যা নিয়েও চর্চা চলছে দলের মধ্যে।
প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা য়খন সবসময় পুরনোদের নিয়ে চলার কথা বলছেন, তার পরও কেন এই গোষ্ঠীবাজি চলছে দলের মধ্যে। তাছাড়া, দলের জনপ্রিয় নেতা দিলীপ ঘোষকেও বৈঠকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে দলের আদি শিবির যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। যদিও মঞ্চে উপস্থিত দিলীপ ঘোষকে সম্ভাষন জানানোর জন্য নাম ঘোষণা করতেই গোটা হল করতালিতে ফেটে পড়ে। স্পষ্ট হয় সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে দিলীপ ঘোষের জনপ্রিয়তা। যা অবশ্য চোখ এড়ায়নি রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের নেতাদের।