প্রয়াত স্বামীর নামে পুর সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিতর্কে কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন
বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: সরকারি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামকরণ হয়েছে চেয়ারপার্সনের প্রয়াত স্বামীর নামে। কৃষ্ণনগর শহরে এই ঘটনায় তুমুল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাসের ৯নম্বর ওয়ার্ডে তৈরি কেন্দ্রটির নাম ‘নবকুমার দাস সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’, যা নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি তৃণমূলের কাউন্সিলারও প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর সাফ জানিয়েছে, এই বিতর্ক ‘অযৌক্তিক’। কারণ সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামকরণ নিয়ে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
নদীয়া জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ রঞ্জিত দাস বলেন, কৃষ্ণনগরের এই বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে এলাকার কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামকরণ করা যায়।
রীতাদেবী অবশ্য এই বিতর্ককে নিম্নরুচির রাজনীতি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ আমার স্বামীর নামে এই সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামকরণ করার জন্য মাস পিটিশন দিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি মেনেই সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই নাম রাখা হয়েছে। অহেতুক রাজনীতি করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক।
কৃষ্ণনগর শহরে ১০টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। এক-একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। ১, ২, ৭, ৮, ৯, ১০, ১৬, ১৭, ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে এগুলি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামকরণ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পুরসভার দাবি, ৩০ এপ্রিল এলাকার মানুষ চেয়ারপার্সনের কাছে মাস পিটিশন জমা করেন। তাতে আবেদন করা হয়, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হচ্ছে, তার নামকরণ করা হোক ‘অন্যতম বিশিষ্ট সমাজসেবী ও আমাদের সকলের প্রণম্য স্বর্গীয় নবকুমার দাসের নামে’।
সম্প্রতি ওই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্বোধন হয়েছে। কেন্দ্রটির নাম নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি শাসকদলের কাউন্সিলারও প্রশ্ন তুলেছেন। শহরের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি তথা কাউন্সিলার প্রদীপ দত্ত বলেন, আমরা জানতাম, মহাপুরুষদের নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়। কিন্তু যাঁর নামে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামকরণ হয়েছে, তিনি কেমন সমাজসেবী ছিলেন, আমার জানা নেই। কোন মিটিংয়ে এই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রস্তাব পাশ হয়েছে, তাও জানি না। খেলার মাঠ দখল করে ওই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে।
কৃষ্ণনগর পুরসভায় চেয়ারপার্সনের গোষ্ঠী বনাম বিরোধী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব নতুন নয়। তাই নামকরণ বিতর্কে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন তৃণমূলের অনেকে।
বিজেপির কাউন্সিলর বর্ণালী গুইন দত্ত বলেন, শক্তিনগরে এরকম সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দরকার আছে বলে মনে হয় না। যে সব ওয়ার্ড পরিষেবায় পিছিয়ে, সেখানে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র করা দরকার। শুনলাম, চেয়ারপার্সনের স্বামীর নামে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে। কিন্তু মিটিংয়ে এটা পাশ হয়নি।
নদীয়া জেলার স্বাস্থ্য ওসি অজয় সামন্ত বলেন, সরকারি জমিতে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হলে তা কারও নামে করা যাবে না, এমনটা নয়। অনেক স্কুলের নাম এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি বা জমিদাতার নামে হয়। এমনকী, অনেক সময় কেউ মারা গেলে তাঁর স্মৃতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামকরণ এলাকার নাম অনুসারেই করা হয়।