• মহম্মদবাজার থেকে দুবরাজপুর, মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে বেহাল জাতীয় সড়ক
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মহম্মদবাজার: দুবরাজপুর থেকে মহম্মদবাজার ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক যেন মৃত্যুপুরী। একের পর এক দুর্ঘটনায় রাস্তা পেরনো নিয়েই চিন্তায় পড়ছেন মানুষজন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২৬ জন করে মানুষ এই রাস্তায় বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। চলতি সপ্তাহে এখনও অবধি এই সড়কে দুর্ঘটনায় ৯ জনের প্রাণ চলে গিয়েছে। বৃহস্পতিবারও পৃথক দুর্ঘটনার বলি হয়েছেন দু’জন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থাই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ পথচলতি মানুষের। সেই সঙ্গে লরি, ডাম্পার চালকদের বেপোরোয়া গতিকেও অনেকে দায়ী করছেন। তবে দিনদিন জাতীয় সড়কে যাত্রা আতঙ্কের হয়ে উঠছে।


    বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের শেওড়াকুরি মোড়ের কাছে বাইকের সঙ্গে লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সিউড়ির দিক থেকে একটি লরি মহম্মদবাজারের দিকে আসছিল। উল্টোদিক থেকে বাইকে করে দুই বন্ধু যাচ্ছিলেন। এরপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বাইক থেকে ছিটকে পড়েন দু’জনই। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অয়ন মালের(২০)। এদিনই চন্দ্রভাগা ব্রিজের কাছে বাইক দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যু ঘটে। মৃতের নাম সাবিত্রী বাগদি(৫৪)। জানা যায়, নাতি তাঁর দিদিমাকে পানুরিয়া থেকে বাইকে করে চাপিয়ে রাজনগরের বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেইসময়ই ওই ব্রিজের কাছে একটি ডাম্পার পিছন থেকে এসে বাইকে সজোরে ধাক্কা মারে। চাকায় পিষ্ট হয়ে সাবিত্রীদেবী মারা যান। কয়েক কিমির ব্যবধানে পরপর দু’টি দুর্ঘটনার কারণে এদিন জাতীয় সড়কে ব্যাপক যানজট দেখা যায়। এলাকার বাসিন্দারা এনিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেন। 


    অভিযোগ, দুবরাজপুর থেকে মহম্মদবাজার পর্যন্ত রাস্তার অধিকাংশ জায়গা বেহাল হয়ে পড়েছে। রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে বিপজ্জনক হয়ে গিয়েছে। কোনও গাড়ি ওভারটেক করার সময় বিটের ভাঙা অংশে পড়ে চাকা গড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এছাড়াও মাঝে মধ্যে বিশালাকার গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা পরপর কয়েকটি নদীর ব্রিজের। বিশেষ করে তিলপাড়া ব্রিজ, সদাইপুরের চিনপাইয়ের বক্রেশ্বর ব্রিজ পেরিয়ে যাওয়া কার্যত দুষ্কর। বড় গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে গেলে আর উঠছে না। একবার কোনও গাড়ির চাকা গর্তে পড়ে দাঁড়িয়ে গেলে পিছনে সারি দিয়ে লরি, ডাম্পার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ চিনপাই ব্রিজ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা করছেন। তখন সব যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে পুলিসের যান নিয়ন্ত্রণের উপর। মানুষজনের অভিযোগ, নামমাত্র কোথাও এক দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কিন্তু বাইক বা গাড়ি নিয়ে কেউ দ্রুতগতিতে পেরিয়ে গেলে আইনত কোনও পদক্ষেপ করা হয় না। 


    জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, জাতীয় সড়কের বেশকিছু ব্রিজ অত্যন্ত খারাপ। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তারাও দ্রুত কাজে নামবে। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, পুলিসের হাতে দুর্ঘটনা কমানোর উপায় সবসময় থাকে না। যেভাবে একের পর এক পাথর, বালিবোঝাই গাড়ি যায়, তাতে সামান্য এদিক ওদিক হলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষজন সবসময় যাতে হেলমেট পরেন, সেই প্রচারে আরও জোর দেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)