• কম জলে ধানচাষের লক্ষ্যে বিদেশি কৃষি বিজ্ঞানীদের এনে কর্মশালা হল লাভপুরে
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে মিলছে না পর্যাপ্ত বৃষ্টির জল। উপরন্তু বেড়েই চলেছে গরম। কার্যত খরার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে কৃষিকাজে। অনাবৃষ্টির ফলে ধান, গম সহ অন্যান্য অর্থকরী ফসলের ফলন এরাজ্যে আশাজনক হচ্ছে না। তার প্রভাব পড়ছে বাজারেও। যার জেরে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাই এবার বিকল্প রাস্তার খোঁজে কৃষিদপ্তর। কম জলে কীভাবে ধান চাষ করা যায়, তা নিয়ে এক অভিনব কর্মশালার আয়োজন করল বীরভূম জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার জেলার কৃষিপ্রধান এলাকা লাভপুর বিধানসভার কৃষকদের নিয়ে এই কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়। বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেখানে জার্মানি থেকে দু’জন ও কানাডা থেকে একজন কৃষিবিজ্ঞানীও উপস্থিত ছিলেন। জেলাশাসক বিধান রায়ের পৌরহিত্যে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।


    প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে বীরভূমে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ। সেই জায়গায় এবার ঘাটতি কিছুটা কমলেও আশানুরূপ হয়নি। এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ৩২৪.৫ মিলিমিটার। সেই জায়গায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০২.৮ মিলিমিটার। জুন এবং জুলাই মাসের গড় বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন ৫৫৯ মিলিমিটার। সেখানে দু’মাসে গড় বৃষ্টি হয়েছে ২৫০ মিলিমিটার। অর্থাৎ দু’মাসে গড়ে ৪৪.১৭ শতাংশ বৃষ্টি হয়েছে। এই ঘাটতির মাঝেই জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে আমন ধান চাষ। তবে প্রকৃতির এই প্রহসনে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চাষের কাজে। সেই বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। বিকল্পভাবে ধান চাষ কীভাবে করা যায়, এনিয়েই ভাবনাচিন্তা শুরু করেন জেলাশাসক সহ কৃষিদপ্তরের আধিকারিকরা। এরপরেই বিদেশি কারিগরি পদ্ধতির সাহায্য নেওয়ার প্রসঙ্গ আসে। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে এদিনের কর্মশালাটি লাভপুরের পঞ্চায়েত সমিতিতে আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাও এই কর্মশালার অন্যতম উদ্যোক্তা। লাভপুর বিধানসভার ১১টি পঞ্চায়েতের চারজন করে প্রতিনিধি হিসেবে মোট ৪৪জন কৃষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা কৃষি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর শিবনাথ ঘোষ, স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ ও বিডিও শিশুতোষ প্রামাণিক সহ অন্যান্যরা। 


    এছাড়া জার্মানি থেকে এই কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন রিসার্চ ফকেন, মারেন ফকেন ও কানাডার জেন বয়েলস নামে তিন কৃষিবিজ্ঞানী। মূলত, এরাজ্যে ধানচাষ করার ক্ষেত্রে জমিতে প্রচুর পরিমাণে জল প্রয়োজন হয়। কৃষকদের ধারণা অতিরিক্ত জল থাকলে ধানের উৎপাদন ভালো হয়। এদিন বিদেশিরা দেখালেন ‘ড্রাই অ্যান্ড ওয়েট কাল্টিভেশন’ পদ্ধতি অর্থাৎ কম জলেও কীভাবে চাষ করা সম্ভব। পাশাপাশি, ধান জমি থেকে বুদবুদ আকারে ক্রমাগত বিষাক্ত মিথেন গ্যাস বেরতে থাকে। সেই গ্যাস সংগ্রহ করে ভিন্ন জায়গায় কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়টিও এদিন দেখানো হয়। 


    জেলাশাসক বলেন, এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে খরা কবলিত এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবেন। স্থানীয় বিধায়ক বলেন, এদিনের কর্মশালায় কৃষকরা যেভাবে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ পেলেন তাতে আগামী দিনে কৃষিকাজে প্রভূত উন্নতি হবে বলে আমি আশাবাদী।
  • Link to this news (বর্তমান)