• সিকিমগামী রাস্তা খুলতে জোরকদমে চলছে কাজ
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: দু’সপ্তাহ ধরে বন্ধ সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক খুলতে তৎপর প্রশাসন। জোরকদমে চলছে ‘পাহাড় কাটিং’। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট সড়কের সেলফিদারায় পরীক্ষামূলকভাবে ছোট গাড়ি চালানো হয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে রাস্তাটি যান চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে বলে খবর। এনিয়ে কালিম্পং ও সিকিমবাসী সহ পর্যটকরা কিছুটা স্বস্তিতে। কালিম্পংয়ের জেলাশাসক বালাসুহ্মণ্যম টি বলেন, এখনও ওই রাস্তা মেরামতির কাজ করছে পূর্তদপ্তর। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তা শেষ হবে বলেই আশা করছি। 


    চলতি বর্ষার মরশুমে কালিম্পংয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ধস ও তিস্তা নদীর ভাঙন এই দুইয়ের সাঁড়াশি আক্রমণে রাস্তা একাধিক জায়গা বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। যার জেরে ৩০ জুন থেকে রাস্তাটি বন্ধ। প্রশাসন সূত্রের খবর, করোনেশন ব্রিজ থেকে রংপো পর্যন্ত রাস্তাটির অংশ কালিম্পং জেলার অধীনে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫২ কিমি। ধস ও নদী ভাঙনের জেরে রাস্তার সংশ্লিষ্ট অংশের কম করে ২৫টি জায়গা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে লিকুভিড়, সেলফিদারা, বিরিকদারা, ২৭ মাইল, ২৮ মাইল, মল্লি, আন্ধেরিঝোরা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মূলত তিস্তা নদীর ছোবলে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে ধসে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। 


    পূর্তদপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা বলেন, কোথাও কোথাও পাহাড় থেকে বোল্ডার, মাটি, গাছ হুড়মুড়িয়ে পড়ছে রাস্তার উপর। তা আর্থমুভার দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এধরনের ধস মোকাবিলায় খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু, বেশকিছু জায়গায় রাস্তা গ্রাস করেছে তিস্তা। সেই জায়গাগুলিতে রাস্তা নেই বললেই চলে। এখন নদীতে জলস্তরের উচ্চতাও অনেকটা। যার ফলে পাহাড়ের পাদদেশে নেমে ভাঙন মেরামত করা কিংবা ভাঙনের বিপরীত দিকে নতুন করে রাস্তা তৈরি সম্ভব নয়। তাই বিপজ্জনক এলাকাগুলিতে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। 


    ইতিমধ্যে পাহাড় কেটে সেলফিদারায় ১০০ মিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেটি সিঙ্গেল লাইন। এদিন পরীক্ষামূলকভাবে ওই এলাকা দিয়ে ছোট গাড়ি পাস করানো হয়েছে। বাকি এলাকাগুলিতেও একইভাবে রাস্তা বের করা হচ্ছে। পূর্তদপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা বলেন, এখন বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কম। আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে রয়েছে। তাই জোরকদমে পাহাড় কাটিংয়ের কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হবে। আপাতত একমুখী যান চলাচলে উপযোগী করে তোলা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলি। 


    প্রসঙ্গত, শিলিগুড়ির থেকে কালিম্পং ও সিকিমের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। যা কালিম্পং ও সিকিমের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত। দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি বন্ধ থাকায় কালিম্পং ও সিকিমের গ্রামীণ অর্থনীতি কার্যত থমকে গিয়েছে। কালিম্পংয়ের হোমস্টেতে বর্ষাকালীন পর্যটকের সংখ্যা কমেছে। ঘুরপথে সকলকে চলাচল করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, শিলিগুড়ি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কালিম্পং ও সিকিমে পাঠাতে গিয়ে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। যার ফলে শিলিগুড়ির বাজারেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। এই অবস্থায় রাস্তাটি খোলার আশ্বাস মেলায় কালিম্পং ও সিকিমের বাসিন্দারা এবং পর্যটকরা খুশি। সকলেরই বক্তব্য, রাস্তাটি খুললে পর্যটনশিল্প সহ সমস্ত ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক উপকার হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)