• ১৫ জনপ্রিয় অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্স কমেছে রাজ্যে, স্বস্তি
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
  • বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: বারংবার প্রচার, গাইডলাইন তৈরি করে মারাত্মক বিপদ সম্পর্কে সচেতন করায় কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে। জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত ২৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ১৫টি কিছুটা হলেও ফিরেছে পুরনো ফর্মে! কমেছে ওষুধের রেজিস্ট্যান্স। আগে ওই ১৫টি জীবনদায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে মিলত উল্লেখযোগ্য ফল। কিন্তু খোলামকুচির মতো সেসব ব্যবহার হওয়ায় ওই শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকগুলিকে দুর্বল ও নিস্তেজ করে ফেলেছিল মানুষ। কখনও হাসপাতালের ইন্ডোর-আউটডোরে যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছে। কখনও আবার মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হয়েছে ওষুধের দোকান থেকে। বিপদের ভয়, ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি সহ নানা কারণে ১৫টি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক জীবাণুযুদ্ধে কিছুটা হলেও পুরনো খেল দেখাতে শুরু করেছে। যা চিকিৎসকদের কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত করছে। 


    এই ১৫টি অ্যান্টিবায়োটিক হল জেন্টামাইসিন, নরফ্লক্সাসিন, লিভোফ্লক্সাসিন, নাইট্রোফুরানটয়েন, এরিথ্রোমাইসিন, টিজেসাইক্লিন, সেফুরক্সিম, সেফটাজিডিম, টাইকারসিলিন, অ্যামোক্সিসিলিন ক্ল্যাভিউলেনিক অ্যাসিড, অ্যাজট্রিওনাম, টিকারসিলিন ক্ল্যাভিউলেনিক অ্যাসিড, পলিমিক্সিন-বি, সেফট্রিয়াজোন ও সালব্যাকটাম। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, অপরিণামদর্শী ব্যবহারের ঠেলায় এই ১৫টি অ্যান্টিবায়োটিক ১০ থেকে ৮০ শতাংশ, কোনও কোনও হাসপাতালে তারও বেশি পরিমাণে রেজিস্ট্যান্স হয়ে গিয়েছিল। দরকারের সময়ই কাজই দিত না। বহুক্ষেত্রে রোগীকে সেপটিসেমিয়া বা মাল্টি অগার্ন ফেলিওরে চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখলেও, কিছুই করতে পারতেন না চিকিৎসকরা। 


    ২০২৩ সালে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে সংগৃহীত প্রায় ১৮ হাজার রোগীর নমুনার (জানুয়ারি থেকে জুন মাস) সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল এ বছর ওই একই সময়ে সংগৃহীত প্রায় ১৬ হাজার নমুনার। তাতেই এই অগ্রগতি ধরা পড়েছে। আগের তুলনায় ওইসব অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্স কমেছে ৩ থেকে ১১ শতাংশ।  স্বাস্থ্যদপ্তরের এক সূত্র জানিয়েছে, এই ১৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে আবার ১০টির রেজিস্ট্যান্সের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। 


    তবে পুরো চিত্রটা ইতিবাচক নয়। ২৫টি মধ্যে ১৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের ফলাফল যেমন ইতিবাচক, তেমনই বাকি ১০টির রেজিস্ট্যান্স বেড়েছে। মানে ওইসব অ্যান্টিবায়োটিক জীবাণুর উপর প্রয়োগ করে আগে খুব কম ফল পাচ্ছিলেন ডাক্তাররা। সেই প্রবণতা কমেনি, উল্টে ২-৬ শতাংশ বেড়েছে। এই ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক হল ইমিপেনাম, লিনেজোলিড, ক্লোরামফেনিকল, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, টেট্রাসাইক্লিন, ট্যাজোব্যাকটাম, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, মেরোপেনাম, ওফ্লক্সাসিন এবং রক্সিথারমাইসিন। 


    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, এই ২৫টি অ্যান্টিবায়োটিক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সংক্রমণে বহুল ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক নীতি তৈরির পর দেখা গিয়েছে, ভয়েই হোক বা ভক্তিতে সরকারি হাসপাতালের ইন্ডোর, সিসিইউ-আইসিইউতে খোলামকুচির ব্যবহার কমেছে। যদিও আউটডোরে যথেচ্ছ ব্যবহার বেড়েছে। এক কর্তা বলেন, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে ওভার দি কাউন্টার অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি কমেনি, বরং অল্প হলেও বেড়েছে। আর ‌ইন্ডোর, সিসিইউ-আইসিইউতে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)