সংবাদদাতা, বারুইপুর: অবশেষে তিন দিনের মাথায় সিপিএম নেতা মান্নান খানের ভেড়ি থেকে ধরা পড়ল নকল সোনা কারবারি সাদ্দাম সর্দার। দু’ঘণ্টার নিখুঁত অপারেশনে কুলতলির ‘বাগদাদ’এর সাদ্দামকে চুপড়িঝাড়া বাণীরধর গ্রামে ভেড়ির আলাঘর থেকে পাকড়াও করল পুলিস। তার বিরুদ্ধে ৯’টি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। নকল সোনা কারবারের পাশাপাশি, জাল নোট এবং অস্ত্র কারবারের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে সাদ্দাম। তাই ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনের ১১৩ ধারাও (টেরোরিস্ট অ্যাক্ট) যুক্ত করেছে পুলিস। এই নতুন আইন প্রণয়নের পর এই প্রথম রাজ্যে কোনও অপরাধীর বিরুদ্ধে এই ধারা লাগু হল। এদিকে, সাদ্দামকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে রেহাই পাননি ওই সিপিএম নেতাও। তাকেও পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার দু’জনকে বারুইপুর আদালতে তোলা হয়। সাদ্দামের আইনজীবী মক্কেলকে সমাজসেবী বলে দাবি করেন। যদিও দু'পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক সাদ্দামকে ১২ দিন এবং মান্নানকে ৫ দিনের পুলিস হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিস জানতে পেরেছে, এই সিপিএম নেতার বিরুদ্ধেও একটি খুনের অভিযোগ উঠেছিল।
কীভাবে ধরা হল সাদ্দামকে? সিকিরহাট এলাকায় বুধবার দুপুরে সাদ্দামকে মুড়ি কিনতে দেখেছিলেন স্থানীয় লোকজন। সোর্স মারফত সেই খবর আসে পুলিসের কাছে। তারপর থেকেই তার গতিবিধির উপর নজর রাখা শুরু হয়। ওইদিন রাতেও ভেড়ির কাছে তিনজনকে হাঁটা চলা করতে দেখেছিলেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। সেই খবরও পায় পুলিস। তারা নিশ্চিত হন, সেখানেই গা ঢাকা দিয়েছে সাদ্দাম। রাত তখন প্রায় দুটো। মান্নানের সঙ্গে বসে মুড়ি খাচ্ছিল কুলতলির অপরাধ জগতের বাদশা। ততক্ষণে পুলিস সাদ্দামের অবস্থান জেনে নিয়েছে। কোনওভাবেই যাতে এবার সাদ্দাম পালাতে না পারে, তার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে মাঠে নেমেছিলেন অফিসাররা। ঠাকুরান নদীতে চুপড়িঝাড়ার আদিবাসী ঘাটে দুটো নৌকায় ছিল কিছু পুলিকর্মী। রাস্তায় আরেকটি দল ছড়িয়ে পড়ে। ঘটিহারানিয়া বাজারে গাড়ি রেখে ভেড়িতে পৌঁছয় আরেকটি দল। সব মিলিয়ে সাদ্দামকে ধরতে টিমে ছিল ৪০ জন পুলিসকর্মী। সব কিছু রেডি করে সেই আলাঘরে ‘আচমকা’ গিয়ে হাজির হন তদন্তকারীরা। সাদ্দাম তাঁদের দেখে হকচকিয়ে যায়। পালানোর চেষ্টাও করে। কিন্তু যেভাবে তাকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল, তাতে সেই চেষ্টা বিফলে যায়। সাদ্দাম ও তার লালপার্টির বন্ধুকে পাকড়াও করে ভোরের দিকে থানায় নিয়ে আসা হয়।
১৫ জুলাই নিজের ডেরা থেকে পালানোর পর বাড়ি সংলগ্ন খাল টপকে প্রথমে তার শ্বশুরবাড়ির এলাকা চুপড়িঝাড়াতে আশ্রয় নিয়েছিল সাদ্দাম। পুলিসকে বিভ্রান্ত করতে দু’বার সিম বদল করে। রাত কাটিয়েছিল উচ্ছের একটি খেতে। দ্বিতীয় রাত কাটায় ইটভাটায়। তৃতীয় রাত মান্নানের ভেড়িতে কাটাবে বলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সাদ্দাম। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সে রাজিও হয়ে যায়। এদিকে, এই ঘটনায় সিপিএমের নেতার নাম জড়ালেও, তা মানতে অস্বীকার বাম নেতৃত্বের। প্রাক্তন বিধায়ক রামশঙ্কর হালদার বলেন, মান্নানের বাবা সিপিএম কর্মী। কিন্তু মান্নান দলের কেউ নয়। বারুইপুর পুলিস জেলার সুপার পলাশ ঢালি বলেন, কেন সুড়ঙ্গ করেছিল, আর কী কী কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল সাদ্দাম, তা জানতে জেরা করা হবে তাকে। মান্নান এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত কি না, সেটাও তদন্ত করা হবে।