নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ দমদমের মেলাবাগান বস্তি। কেউ হতাহত না হলেও সর্বস্ব হারিয়ে জলে পড়েছিলেন দিন আনা দিন খাওয়া বহু মানুষ। আগুনে পুড়ে গবাদি পশুরও মৃত্যু হয়েছিল। অবশেষে মেলাবাগান বস্তি তৈরির কাজ শুরু করল প্রশাসন। পুজোর আগে বাসিন্দাদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে শুরু হয়েছে কাজ।
১৩ এপ্রিল সকাল ১০টা নাগাদ বাগজোলা খাল লাগোয়া মেলাবাগান বস্তিতে আগুন লাগে। সে জায়গায় প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ঠাসা ছিল। দাহ্য বস্তু মজুত থাকার কারণে মুহূর্তে গোটা বস্তি জতুগৃহের রূপ নিয়েছিল। দিনের বেলা ছিল বলে অধিকাংশ মানুষ কর্মস্থলে গিয়েছিলেন। রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন মহিলারা। তাঁরা আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে শিশুদের কোলে নিয়ে কোনওমতে আগুনের আওতার বাইরে বের হতে পেরেছিলেন। তারপর লহমায় বাসিন্দাদের সামান্য সঞ্চয়, আসবাবপত্র সব ভস্মীভূত হয়ে যায়। বস্তি লাগোয়া খাটালে আগুন ছড়িয়ে যায়। তার ফলে একাধিক গবাদি পশু আগুনে ঝলসে মারা যায়। প্রায় ১০০ বাড়ির বাসিন্দাকে পাশের রবীন্দ্রভবনে রাখার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। এখনও অস্থায়ীভাবে দুর্গতরা থাকছেন সেখানে। পুরসভা তাঁদের খাওয়া দাওয়া, পোশাকের বন্দোবস্ত করেছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলাপ্রশাসনও সহযোগিতা করেছে। কিন্তু ভোটের কারণে তড়িঘড়ি বস্তি নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। ভোটের ফল বের হওয়ার পর বস্তিতে নতুন করে ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মেঝে ঢালাই করে চারপাশ টিন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে চালাঘর। বস্তিবাসীরা এসে মাঝেমধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ তদারকি করছেন। তাঁরাও চাইছেন দ্রুত নিজের ঘরে ফিরতে।
নতুন করে বস্তি তৈরির পর সতর্ক না হলে ফের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কারণ বস্তির বাসিন্দাদের সিংহভাগ ডাস্টবিন থেকে বিভিন্ন প্লাস্টিকের সামগ্রী সংগ্রহ করে বাড়ির মধ্যে ও আশপাশে জমা রাখতেন। তাঁদের বিকল্প কোনও পেশা নেই। নতুন করে বাড়িতে ঢোকার পর এই কাজই তাঁরা করবেন বলে বক্তব্য অনেকের। ফলে বস্তির মধ্যে ফের ওই ধরনের সামগ্রী মজুত হওয়ার আশঙ্কা। ফলে আবার যে কোনওদিন বড় বিপদ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা। তাই বস্তি লাগোয়া এলাকায় প্লাস্টিকের সামগ্রী রাখার কোনও গোডাউন তৈরি করলে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা কমবে বলে অনেকে মনে করছেন।
২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অস্মি পোদ্দার বলেন, ‘মেলাবাগান বস্তিতে প্রায় ১০০টি বাড়ি ছিল। পুরসভার উদ্যোগে ভস্মীভূত বাড়ি নতুন করে তৈরি হচ্ছে। বস্তিবাসীদের অনেকেই প্লাস্টিকের সামগ্রী সংগ্রহ করে বাড়ির পাশে মজুত করতেন। এটাই তাঁদের পেশা। আমরা চেষ্টা করব মানুষকে বোঝানোর। যাতে তাঁরা বাড়ির মধ্যে বা আশপাশে দাহ্য পদার্থ মজুত না করেন।’