• জামালের প্রাসাদোপম বাড়ি সম্পূর্ণ বেআইনি
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
  • সৌম্যজিৎ সাহ,  দক্ষিণ ২৪ পরগনা: প্রায় এক বিঘে জমির উপর গড়ে উঠেছে তার প্রাসাদোপম বাড়ি। কিন্তু মার্বেল টাইলস দিয়ে মোড়া এই প্রাসাদ যে সম্পূর্ণ বেআইনি! কারণ নিয়ম অনুযায়ী, গ্রামে বাড়ি করতে গেলে পঞ্চায়েতে বিল্ডিং প্ল্যান জমা দিতে হয়। সেটা অনুমোদন পাওয়ার পরই নির্মাণ কাজে শুরু করা যায়। কিন্তু সোনারপুরের স্বঘোষিত ‘মাতব্বর’ জামালউদ্দিন ওরফে জামাল সর্দার সেসব নিয়মের ধার ধারেনি। তার বাড়ি যে গ্রামে, সেটি সোনারপুর ব্লকের প্রতাপনগর পঞ্চায়েতের অধীনস্থ। কিন্তু পঞ্চায়েতের তরফে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এই বাড়ির কোনও প্ল্যান বা নথি কোনওকিছুই নেই অফিসে। সেখানকার রেকর্ডেও মেলেনি কোনও কাগজপত্র। ফলে জামালের বাড়ি যে সম্পূর্ণ আইনবিরুদ্ধ, তা স্পষ্ট। প্রশ্ন হল, কীভাবে তাহলে বিনা বাধায় এই অট্টালিকা বানিয়ে ফেলল জামাল? 


     শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েতে সম্পত্তি কর নির্ধারণ হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জমিজামার পরিমাণ বা ক’তলা বাড়ি আছে প্রভৃতির উপর। কিন্তু জামাল যেন সেই নিয়মেরও উর্ধ্বে। অভিযোগ, তিন তলা বাড়ি বানিয়ে ফেললেও ট্যাক্সের ভ্যালুয়েশন করায়নি সে। তাই পঞ্চায়েতের যে ন্যূনতম কর, সেই ৫০ টাকা দিয়েই দায় সেরেছে এই তৃণমূল কর্মী। এত অনিয়মের পর এবার প্রতাপনগর পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হবে কি না, এখন সেটাই দেখার। এক আধিকারিক বলেন, আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চয়ই করা হবে। 


    জামালের এই বাড়ির বয়স প্রায় ১০ বছর। সূত্রের খবর, এই ‘রাজপ্রাসাদ’এর ভ্যালুয়েশন করলে কমপক্ষে হাজার থেকে বারোশো টাকা বার্ষিক কর হবেই। অথচ এতগুলি বছর ধরে মাত্র ৫০ টাকা ট্যাক্স দিয়ে আসছিল জামাল। এই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েও বিগত দুটি বছর কোনও কর দেয়নি বলে পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই কর বাবদও ১২০ টাকা বকেয়া রেখেছে জামাল। সেই টাকা সংগ্রহ করতে বেশ কয়েকবার তার বাড়ি গিয়েছিলেন পঞ্চায়েতের কর সংগ্রহকারীরা। দরজায় কলিংবেল বাজানো হলেও, খোলা তো দূরাস্ত, সাড়া পর্যন্ত দেয়নি কেউ। অগত্যা খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়েছে কর সংগ্রহকারীদের। জানা গিয়েছে, জামালের বাড়িতে নাকি যখন তখন যে কেউ ঢুকতে পারে না। তার বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি নেওয়ার অলিখিত নিয়ম রয়েছে। তার দাপট এতটাই ছিল যে, পঞ্চায়েত থেকে করের ভ্যালুয়েশন করিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হলেও, তাতে কর্ণপাত করেনি জামাল। এদিকে, জামালের বাড়িতে যে কচ্ছপটি রয়েছে সেটির নাম ইন্ডিয়ান সফ্ট শিল্ড টারটেল। এই প্রাণী বাড়িতে রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। তাই এই কচ্ছপটি উদ্ধার করার জন্য বুধবার রাতেই জামালের বাড়ি গিয়েছিলেন বারুইপুর রেঞ্জের বনকর্মীরা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কেউ গেট না খোলায় তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবারও রেঞ্জ অফিস থেকে রেঞ্জার সহ কর্মীরা যেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ ভিতর থেকে কেউ এসে তালা খোলেনি।  পরপর দু’দিনই খালি হাতে ফিরলেন  বনকর্মীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)