• কালীঘাটের সদর ঘাটে ফিরছে শতবর্ষপ্রাচীন ঐতিহ্য
    বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
  • সোহম কর, কলকাতা: একটা সময় কালীঘাট মন্দিরের নহবতখানা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল আদি গঙ্গা। সেই গঙ্গা এখন একটু দূরে সরেছে। সরু কালো জলের স্রোত বয়ে নিয়ে যায় আবর্জনা। এককালে ওই কালীক্ষেত্রেই ছিল বহু ঘাট। এখন সদর ঘাট আর খেয়া ঘাটের নামই শোনা যায়। কালীঘাট মন্দিরের কাছেই এই সদর ঘাট। শতাব্দী প্রাচীন এই ঘাটের সংস্কারের কাজ শুরু করেছিল পুরসভা। ঘাটের সামনে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে চলছে সেই কাজ। তা করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ঘাটের পুরনো সিঁড়ি। কর্মরত শ্রমিকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, কর্পোরেশন ঠিক করেছে সিঁড়িগুলি মেরামত করে ঐতিহ্য মেনে লাল রঙের স্যান্ড স্টোন দিয়ে তৈরি করা হবে। 


    এই লাল সিঁড়ির স্মৃতি স্থানীয় প্রবীণদের মধ্যে এখনও টাটকা। এই ঘাটে পুজোর সামগ্রী বিক্রি করেন এক মহিলা। তিনি বললেন, আগে তো এখানে সিঁড়ি ছিল। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, লাল বরফির সিঁড়ি। তারপর তো মার্বেলের হল। তারও পরে পুরোটা ঢালাই করে দেওয়া হল। নীচের দিকে জল সরালে আগেকার লাল সিঁড়ি নিশ্চয়ই দেখা যাবে। কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, নীচের পুরনো সিঁড়িগুলি মোটামুটি ভালো অবস্থাতেই আছে। ইট বেরিয়ে আছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ঘাট সংলগ্ন মন্দিরের চাতালের কাছ থেকে সিঁড়ি বেরিয়ে এসেছে। ওগুলো সবটাই মার্বেল পাথরের ঢালাই করা। সিঁড়ি যতখানি রয়েছে ততদূর নদীর নীচে যাওয়া হবে। তবে এবার পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর মার্বেল করা হবে না। শতবর্ষের ঐতিহ্য ফের ফিরিয়ে আনা হবে। কী সেই ঐতিহ্য? স্যান্ড স্টোনের লাল সিঁড়ি। ‘ঐতিহাসিক’ সিঁড়ি ফিরিয়ে আনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মনে করা হচ্ছে, পাড় থেকে প্রায় ১২ ফুট নীচ পর্যন্ত সিঁড়ি পাওয়া যাবে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, এই আদি গঙ্গার মাঝ বরাবর আগে একটি চাতালও ছিল। তাই খুব সাবধানে কাজ করতে হচ্ছে। যাতে কোনওভাবেই পুরনো সিঁড়ি ভেঙে না যায়। সূত্রের খবর, সদর ঘাটের বাঁ দিকে একটি ব্রিজ রয়েছে। তার কাছে একটি নতুন সিঁড়ি হয়েছে। ওটা খেয়া ঘাটের সিঁড়ি। ওগুলি পুনরুদ্ধার হবে। এছাড়াও কালীঘাট থেকে টালিগঞ্জের দিকের বেশ কয়েকটি ঘাট পুনরুদ্ধার হচ্ছে।


    ইতিহাসবিদরা বলেন, এককালে এই কালীক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ঘাট ছিল। এখন কালের নিয়মে সেসব গঙ্গায় চলে গিয়েছে। আবার কিছু থেকে গিয়েছে। শোনা যায়, হুজুরিমল নামের ঘাট ছিল। তবে সদর ঘাট কত পুরনো হতে পারে, সেটা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেন না। কালীঘাট আসলে ধনুকের মতো। ক্রিক রো থেকে যে গঙ্গা ছিল, সেটাকে বলা হতো কালীগঙ্গা। কালীগঙ্গা পাড় হলেই শুরু হতো কালীক্ষেত্র। তারপর থেকে ছিল শিবক্ষেত্র।  
  • Link to this news (বর্তমান)